Advertisement
E-Paper

বাইক থেকে পড়তেই পিষে দিল হাতিটা

ঝোপের কাঁটাগাছে এখনও আটকে রয়েছে জরির পাড় দেওয়া ঝলমলে লাল-কালো রংয়ের শাড়িটা। জঙ্গলপথের আশেপাশে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা শাঁখা, কাঁচের চুড়ির টুকরো, চুলের ক্লিপ। মাটির রাস্তায় এখনও ঘষটানোর টাটকা দাগ।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৮
ঝাড়গ্রামের বারোডাঙার জঙ্গল রাস্তার ধারে কাঁটাঝোপে আটকে রয়েছে গঙ্গারানি মাহাতোর শাড়ি। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ঝাড়গ্রামের বারোডাঙার জঙ্গল রাস্তার ধারে কাঁটাঝোপে আটকে রয়েছে গঙ্গারানি মাহাতোর শাড়ি। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ঝোপের কাঁটাগাছে এখনও আটকে রয়েছে জরির পাড় দেওয়া ঝলমলে লাল-কালো রংয়ের শাড়িটা। জঙ্গলপথের আশেপাশে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা শাঁখা, কাঁচের চুড়ির টুকরো, চুলের ক্লিপ। মাটির রাস্তায় এখনও ঘষটানোর টাটকা দাগ।

এই তো মঙ্গলবার বিকেলে শাড়ি পরে সেজেগুজে মামাতো ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন সাঁকরাইল ব্লকের ধানশোলা গ্রামের গঙ্গারানি মাহাতো (৪৩)। মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী বছর পঞ্চাশের ভবতারণ মাহাতো। শেষ বিকেলের সূর্য তখন লাল টকটকে। ঝাড়গ্রামের বারোডাঙায় কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জঙ্গল রাস্তায় কাজুগাছের জঙ্গল ফুঁড়ে আচমকা তাঁদের সামনে হাজির হয় একটি রেসিডেন্ট দাঁতাল হাতি। মোটরবাইকের আওয়াজ শুনে হাতিটি তেড়ে আসে। সরু জঙ্গল রাস্তায় বাইক ঘুরিয়ে পালানোর মতো অবস্থা ছিল না। অগত্যা অ্যাক্সিলেটর মুচড়ে বাইকের গতি বাড়িয়ে দেন ভবতারণবাবু। হাতিটিকে পাশ কাটিয়ে অসমান মাটির রাস্তায় বাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে পালাতে গিয়ে ঘটে যায় চরম বিপত্তি। বাইকের পিছনের সিট থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে যান গঙ্গারানিদেবী। মুহূর্তে দৈত্যদাঁতালটি তাঁকে ধরে ফেলে। ‘আমাকে মেরে ফেললো গো’ বলে একবার কেবল চিৎকার করেছিলেন গঙ্গারানিদেবী। তারপর সব চুপ। ততক্ষণে হাতিটি তাঁকে পায়ে পিষে দিয়ে পেটে দাঁত ঢুকিয়ে ফালাফালা করে দিতে থাকে।

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে স্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে কান্না ছাড়া আর গত্যন্তর ছিল না ভবতারণবাবুর। হাতিটি ততক্ষণে গঙ্গারানিদেবীর দেহটা মাটির রাস্তায় ঘষটে কিছুটা দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে ফের পায়ে পিষে দেয়। গঙ্গারানিদেবীকে মারার পরে তাঁর কালো রংয়ের ব্যাগটি দাঁত দিয়ে ফালা করে কালোজামের প্যাকেট সাবাড় করে দেয় হাতিটি। কোনও মতে পালিয়ে কিছুটা দূরে বরাশুলি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন ভবতারণবাবু। স্থানীয়রা বন দফতরে খবর দেন। হাতিটি মৃতদেহ আগলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকায় হুলাপার্টি নিয়ে আসা হয়। হুলাপার্টির লোকজন হাতিটিকে বেশ কিছুটা দূরে খেদিয়ে দেন।

মঙ্গলবার বিকেলের এই ঘটনার পরে নিজের অদৃষ্টকেই দুষছেন ভবতারণবাবু। বন দফতরের অবশ্য বক্তব্য, ভবতারণবাবু একটু সতর্ক হলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যেত। কারণ, জঙ্গলমহলে এ সময় হাতিরা বিকেল হলেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ে। সাঁকরাইল ব্লকের ধানশোলা গ্রামের বাসিন্দা প্রান্তিক চাষি ভবতারণবাবুর সামান্য জমিজমা রয়েছে। বাকি সময় দিনমজুরির কাজ করে সংসার চলে। প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলেও রয়েছে তাঁর। ভবতারণবাবু বলেন, “আমরা সাধারণত শর্টকার্টের জঙ্গল রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করি। আগেও হাতির সামনে পড়েছি। কিন্তু এমনটা যে হবে ভাবতে পারিনি।” মানিকপাড়া রেঞ্জের হুলাপার্টির সদস্য শ্রীকান্ত মাহাতো, দীননাথ রানা, শক্তি সিংহ, শুভাশিস শিট-রা বলেন, “গ্রীষ্মের বিকেলে ঘন জঙ্গল রাস্তায় যাতায়াত করাটা মোটেই নিরাপদ নয়। সব সময় সতর্ক ভাবে চলাফেরা করা উচিত।” খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৃতার পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

Elephant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy