Advertisement
E-Paper

হাতেগোনার সমর্থনেই শপথ জঙ্গল বাঁচানোর

রবিবার এই পদযাত্রার ডাক দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের পরিবেশ কর্মীরা।  শহরের পরিবেশ কর্মী এবং কিছু বাসিন্দা দীর্ঘপথ হেঁটেছেন। ছিল হাতে গোনা কয়েকজন পড়ুয়াও।

জঙ্গল রাস্তায় এগোচ্ছে পদযাত্রা। ছবি: কিংশুক গুপ্ত

জঙ্গল রাস্তায় এগোচ্ছে পদযাত্রা। ছবি: কিংশুক গুপ্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:৫৭
Share
Save

পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে শহর থেকে গ্রাম ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা। পায়ে পায়ে উঠল স্লোগান, তবে মিছিল দীর্ঘ হল না। উল্টে মিছিলে শামিল মানুষের সংখ্যা কমল। আর তাতেই প্রশ্ন উঠে গেল, গাছ বাঁচাতে, জঙ্গল আগলাতে আদৌ আমরা সচেতন তো!

রবিবার এই পদযাত্রার ডাক দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের পরিবেশ কর্মীরা। শহরের পরিবেশ কর্মী এবং কিছু বাসিন্দা দীর্ঘপথ হেঁটেছেন। ছিল হাতে গোনা কয়েকজন পড়ুয়াও। কিন্তু পদযাত্রার শুরুতে ১২০-১৩০ জন থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছন জনা সত্তর।

পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম শহর ও বনাঞ্চলে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে শালগাছ কাটা হচ্ছে। বনভূমির চরিত্র বদলে দেওয়া হচ্ছে। ঝরা শালপাতায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ায় পুড়ে খাক হচ্ছে জঙ্গল। ক্ষতি হচ্ছে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের। অরণ্যশহরে শালগাছে পেরেক পুঁতে বিজ্ঞাপন দেওয়াতেও কম ক্ষতি হচ্ছে না। তার উপর পলিব্যাগ-থার্মোকলের অবাধ ব্যবহার চলছে। জঙ্গল এলাকায় ফেলা হচ্ছে আবর্জনা, মেডিক্যাল বর্জ্যও। ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে কলকারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণও ঠিকমতো হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

এ সব নিয়ে জনসচেনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণেই এ দিন পদযাত্রার ডাক দিয়েছিল ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’। সকাল সাড়ে আটটায় রবীন্দ্রপার্কের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। শহরের কলেজ মোড় ও সাবিত্রী মন্দির মোড়ে পথসভাও করেন পরিবেশ কর্মীরা। ঝাড়গ্রাম-লোধাশুলি ৫ নম্বর রাজ্য ধরে পদযাত্রা দুপুর দু’টো নাগাদ জিতুশোল পৌঁছয়। তারপর গড়শালবনির প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পরিবেশ সংক্রান্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দূষণ বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করে খুদে পড়ুয়ারা।

এই কর্মসূচি সফল করতে বেশ কিছুদিন ধরে পোস্টার সাঁটিয়ে, লিফলেট ছড়িয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলেছিল প্রচার। প্রতিটি স্কুলে গিয়েও পদযাত্রায় যোগদানের আবেদন করে এসেছিলেন উদ্যোক্তারা। তবে রবিবার ছুটির দিনে এই কর্মসূচিতে নাগরিকদের যোগদানের হার দেখে পদযাত্রায় যোগদানকারীদের একাংশ প্রশ্ন তুললেন, জঙ্গল শেষ হয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলের স্বাভাবিক পরিবেশ ও বাসস্থান হারিয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণিরা লোকালয়ে ঢুকছে। রাশি রাশি শালগাছ ‘খুন’ হচ্ছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। এরপরও গরিষ্ঠ নাগরিকরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’-এর আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউত বলেন, ‘‘ফেসবুকে অনেকে বিপ্লব করতে পারেন। কিন্তু পথে নেমে যেটুকু আমরা করতে পেরেছি সেটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। কাউকে তো শুরু করতেই হবে।’’

প্রায় আড়াই দশক আগে ঝাড়গ্রামে প্রথম পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন পরিবেশ কর্মী বিজন ষড়ঙ্গী। শালগাছ কাটার বিরুদ্ধে এবং পাথর ভাঙার কল ও সিমেন্ট কারখানার দূষণ নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন বিজন। সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে চিচুরগেড়িয়া গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দার মৃত্যুর পরে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন মৃতদের পরিজনরা। পাথর ভাঙার কল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিজনের প্রয়াণের পরে এখন স্পঞ্জ আয়রন সহ আরও নানা কারখানার দূষণ নিয়ে সরব হচ্ছেন পরিবেশ কর্মীরা। পদযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন বিজনের স্ত্রী পরিবেশ কর্মী অপরাজিতা ষড়ঙ্গী। অপরাজিতা বলেন, ‘‘নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ একদিন ঠিক বুঝবেন।’’

Environmentalist Jhargram March

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}