Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে বন্ধ কারখানা

গোষ্ঠী কোন্দল ঠেকাতে তৃণমূলের তরফে বারবার বলা হয়েছে, রাজ্যের সব কারখানায় দলের তরফে একটাই সংগঠন থাকবে। কিন্তু উচ্চ নেতৃত্বের সেই নির্দেশ যে তৃণমূল স্তরে পৌঁছয়নি তার প্রমাণ মিলল আরও একবার।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
কাজ বন্ধ মানিকপাড়ার এই কাগজ কারখানায়। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কাজ বন্ধ মানিকপাড়ার এই কাগজ কারখানায়। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

গোষ্ঠী কোন্দল ঠেকাতে তৃণমূলের তরফে বারবার বলা হয়েছে, রাজ্যের সব কারখানায় দলের তরফে একটাই সংগঠন থাকবে। কিন্তু উচ্চ নেতৃত্বের সেই নির্দেশ যে তৃণমূল স্তরে পৌঁছয়নি তার প্রমাণ মিলল আরও একবার। কারখানায় শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর সাঁড়াশি চাপে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ঝাড়গ্রামে মানিকপাড়ার একটি কাগজ কলে। এই কাজিয়ার নেপথ্যে রয়েছেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো ও ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার নেতৃত্বাধীন দুই পৃথক শ্রমিক সংগঠন।

জানা গিয়েছে, ‘বালাজি পেপার অ্যান্ড নিউজ প্রিন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে এই কারখানায় দৈনিক একশো টন নিউজ প্রিন্ট ও রাইটিং পেপার তৈরি হয়। কারখানায় বিরোধীদের দু’টি সংগঠন কার্যত অস্বিস্তহীন। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনটিই সর্বেসর্বা। তৃণমূল প্রভাবিত রেজিস্টার্ড সংগঠনটির সম্পাদক হলেন কারখানারই শ্রমিক কালিপদ মাহাতো। শাসকদলের ওই শ্রমিক সংগঠনের রাশ রয়েছে ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার হাতে। সংগঠনটির সঙ্গে ২০১৪ সালে তিন বছরের জন্য শ্রমিক-মালিক চুক্তি করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে, গত জানুয়ারিতে ওই কারখানায় পাল্টা একটা সংগঠন গড়েছেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোর গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের সঙ্গে বিধায়কের গোষ্ঠীর সংগঠনটির আঁতাত থাকায় শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই কমিটির সম্পাদক হলেন কারখানার শ্রমিক গৌরাঙ্গ মাহাতো। ওই সংগঠনের সভাপতি পদে রয়েছেন মন্ত্রীর অনুগামী মানিকপাড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার সিংহ।

কারখানা কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা শ্রমিকের সংখ্যা ১৬০। কাঁচামাল প্রস্তুতি-সহ কয়েকটি বিভাগে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে আরও শ’তিনেক শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রতি মাসের ১২ তারিখ ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু গত সোমবার ১২ তারিখ হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার কারখানার ম্যানেজার শিবশঙ্কর নন্দর কাছে প্রতিবাদ জানাতে যান মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতোর গোষ্ঠীর শ্রমিকরা। শিবশঙ্করবাবুও শ্রমিকদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

এরপরই বেতন না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। বিনা উৎপাদনে শ্রমিকদের হাজিরা দেওয়া যাবে না জানিয়ে ঠিকাদারি সংস্থাকে নোটিস দেন কর্তৃপক্ষ। এবং কারখানার হাজিরা বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার ফের কারখানা কর্তৃপক্ষ, ঠিকাদার সংস্থাকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয়, যাঁদের জন্য কাঁচামাল তৈরি বন্ধ রয়েছে সেই চারজন শ্রমিককে বরখাস্ত করতে হবে। ওই চারজন শ্রমিক হলেন সোমনাথ মাহাতো, গোবিন্দ মাহাতো, কার্তিক মাহাতো ও বাবলু মান্না।

এরপর মন্ত্রী গোষ্ঠীর শ্রমিক সংগঠনটির তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই চারজনকে বরখাস্ত করা হলে কারখানা অচল থাকবে। মন্ত্রী গোষ্ঠীর সংগঠনের সম্পাদক গৌরাঙ্গ মাহাতো বলেন, “শ্রমিক স্বার্থ দেখার জন্যই জানুয়ারিতে নেতৃত্বের নির্দেশেই সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। আগের কমিটির সম্পাদক মালিকপক্ষের দালালি করছেন।’’ ওই চারজন শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবিতে কারখানা গেটের বাইরে ধর্নাতেও বসেন তাঁরা। এ দিন দুপুরে বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার গোষ্ঠীর সংগঠনের শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে ঢুকে স্লোগান দিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে মন্ত্রী গোষ্ঠীর বাধায় তাঁরা কাজে যোগ দিতে পারেননি।

কারখানার ম্যানেজার শিবশঙ্কর নন্দের অভিযোগের তির তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দিকেই। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছর বিভিন্ন বিষয়ে একটি ইউনিয়নের নিজস্ব ঝামেলায় কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাঙ্ক ছুটি থাকায় ঠিকাদারি সংস্থটি ১৪ সেপ্টেম্বর বেতন দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। অথচ তা সত্ত্বেও একাংশ শ্রমিক চড়াও হল।’’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই চারজন শ্রমিক বার বার গোলমাল পাকান। তাই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই চারজনকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইএনটিটিইউসি-র রেজিস্টার্ড শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক কালিপদ মাহাতো আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছেন।” ঠিকাদার সংস্থার সুপারভাইজার অঞ্জন দত্ত বলেন, ‘‘কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই চার শ্রমিককে বরখাস্ত করতে বলছেন। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’’ বিধায়ক সংগঠনের সম্পাদক কালিপদবাবু বলেন, “একটি পাল্টা গোষ্ঠী কারখানায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছেন। ওরা সমান্তরাল সংগঠন চালাচ্ছে।”

অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডল বলেন, “কারখানা বন্ধ করে আন্দোলন সমর্থন করি না। এই পরিস্থিতির জন্য মালিকপক্ষই দায়ী।’’ মন্ত্রী চূড়ামণিবাবুর স্পষ্ট জবাব,“সম্মেলনের শ্রমিক ইউনিয়নের এখন নতুন কমিটি হয়েছে। পুজোর মুখে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা যাবে না। আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেব।” ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা বলেন, “বিষয়টা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, ‘‘সংগঠন একটাই। সমস্যার বিষয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখব।”

Factory closed TMC group clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy