Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নোটের গেরোয় আটকে রয়েছে চাষির ঋণও

নোট বাতিলের গেরোয় থমকে গিয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বোরো চাষের ঋণ দেওয়া। আটকে গিয়েছে কিষান ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করাও।

অপ্রমেয় দত্তগুপ্ত
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

নোট বাতিলের গেরোয় থমকে গিয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বোরো চাষের ঋণ দেওয়া। আটকে গিয়েছে কিষান ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করাও। ফলে বিপাকে পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের হাজার হাজার কৃষক।

পূর্ব মেদিনীপুরের কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি দফতরের আশঙ্কা এই ঘটনার জেরে বোরো ধানের মূলধনের জোগান কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে কমতে পারে চাষের এলাকাও। অন্য দিকে কিষান ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়িয়ে চাষবাসের আরও বেশি মূলধনের জোগান ঘটানো এবং প্রান্তিক চাষিদের উৎসাহ করার জন্য নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া রাজ্যের ‘ফার্মার্স ফিনানসিয়াল ইনক্লিউশন’ প্রকল্প গোড়াতেই ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন কৃষি আধিকারিকরা।

এ দিকে আমন ধান কাটার মরসুম শুরু হলেও জেলায় টাকার অভাবে চাষিরা মাঠে নামতে পারছেন না। তারা ব্যাঙ্ক ও সমবায়ে টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। নবান্নে কৃষি দফতরের কন্ট্রোল রুমে এই দুটি বিষয়ে সামগ্রিক রিপোর্ট পাঠিয়েছে জেলা কৃষি দফতর।

জেলার সহ কৃষি অধিকর্তা(শস্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, ‘‘নোট বাতিলের ফলে কৃষকরা কী ধরণের সমস্যায় পড়ছেন সে ব্যাপারে প্রত্যেকদিন নবান্নের কন্ট্রোল রুমে রিপোর্টিং করার জন্য একজন আধিকারিকের নেতৃত্বে জেলায় দ তৈরি করা হয়েছে। রোজ ব্লক আধিকারিকরা এলাকার চাষিদের সমস্যা নিয়ে জেলার রিপোর্টিং সেলের কাছে খবর দিচ্ছেন। ব্লক আধিকারিকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কিষান ক্রেডিট কার্ডের অন্তর্ভূক্ত চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে।’’

জেলার কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলার ব্যাঙ্কগুলিতে পুজোর পর অক্টোবর মাস থেকে কিষান ক্রেডিট কার্ডে ঋণদান ও নতুন কার্ড ইস্যুর কাজ শুরু হয়েছে। হঠাৎ বোরো মরসুম শুরুর মুখে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। এই জেলায় ছয় লক্ষের বেশি কিষান ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার কৃষক রয়েছেন। তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষক সমস্যার সম্মুখীন।

জানা গিয়েছে, ব্লক থেকে চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র সাক্ষর করে ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও তা পড়ে রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের সিংহভাগ প্রান্তিক চাষি প্রতি বছরই ব্যাঙ্ক বা সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে বোরো চাষ করেন। তারা প্রতি বছর বোরো চাষের জন্য গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ঋণ নেন। সেই ঋণের টাকা বোরো চাষে কাজে লাগান কৃষকরা। এই বছর নোট বাতিলের গেরোয় বোরো চাষের মূলধনের জোগানে ঘাটতি দেখা দেবে।

কৃষক সংগ্রাম পরিষদের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক নারায়নচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলি এখন চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ডের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথাই বলতে চাইছে না। তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নোট বাতিলের সমস্যার জন্য সমবায়গুলিও ঋণ দিতে পারছে না। ধান কাটার মরসুম শুরু হলেও মাঠে শ্রমিকদের নামানো যাচ্ছে না টাকার অভাবে। ধান পেকে গেলেও মাঠেই ধান পড়ে রয়েছে। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস বিভিন্ন এলাকায় চাষিদের জন্য ক্যাম্প করে নোট বদলানোর বা টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক, এই দাবি জানাই।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer’s loan demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE