পূর্ব মেদিনীপুরে এসে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন মাছ চাষের পাশাপাশি কৃষিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিও থাকবে, মাছের চাষও হবে।
কয়েক বছর আগেও জেলার ময়না ব্লকে বর্ষায় ধানচাষের জমিতে মাছচাষ শুরু হওয়ায় আর্থিক দিক থেকে লাভবান হচ্ছিলেন ধান চাষি থেকে মাছচাষি সকলেই। ফলে ধানজমিকে মাছের ভেড়িতে বদলানোর প্রবণতা বাড়ে। যার পরিণতিতে ময়না, তমলুক, নন্দকুমার, ভগবানপুর, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রামে-১ ও ২, শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের জমির বেশিরভাগ বদলে গিয়েছে ভেড়িতে। আর্থিক লাভের এই সুযোগকে হাতিয়ার করে এলাকায় দাপট বাড়িয়েছে ভেড়ির মালিকেরা।
চাষিদের অভিযোগ, মাছ চাষের জন্য দুই ফসলি ধানের জমি নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের তরফে কোনওরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। প্রশাসনিক এই নিষ্ক্রিয়তায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভেড়ির কারবারীরা। ভেড়ি করতে গিয়ে চাষের জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন চাষিরা। এক সময় ভেড়ির জন্য জমি দিলেও যখন তা ফের চাষের জন্য ফেরত নেওয়া হয় তখন তার উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। সেই জমিকে ফের চাষযোগ্য করে তুলতে খুবই সমস্যা হয় বলে তাঁদের বক্তব্য।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ধানচাষের জমির মাটির উপর থেকে ৯ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত উর্বর অংশ থাকে। ধানজমিতে মাছের ভেড়ি তৈরির সময় মাটির উপর থেকে প্রায় ২ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি তুলে ভেড়ির চারদিকে বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে মাটির উর্বর অংশের পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কয়েক বছর ভেড়িতে মাছ চাষের পর ফের ধানচাষ করতে গেলে চাষিরা সমস্যায় পড়ে। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘‘ধানের জমিতে মাছের ভেড়ি হলে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা চলে যাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ভেড়িতে নোনাজল ঢোকানো হলে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। ফলে জমির উর্বরতা কমে যায়। তাই চাষজমিকে ভেড়িতে পরিণত করার আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’
ধানজমিতে ভেড়ি তৈরি নিয়ে পঞ্চায়েতের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন চাষিরা। ভেড়ির জন্য ধানজমি নেওয়া চেষ্টার বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন এমনকী জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ চাষিদের।
স্থানীয় কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের দাবি, ‘‘ভূমি-সংস্কার দফতরের অনুমতি না নিয়ে বেআইনিভাবে কৃষিজমিতে ভেড়ি তৈরি বন্ধে পঞ্চায়েত ও প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ও প্রশাসন নিষ্ক্রিয় থাকায় চাষিরা সমস্যায় পড়ছে।’’
প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য-প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। চাষের পাশাপাশি ভেড়িরও প্রয়োজন রয়েছে। তাই মাছের চাষ যাতে যথাযথ পদ্ধতি মেনে হয় পঞ্চায়েত ও ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যেখানে মানুষ চাইবে না, সেখানে কৃষিজমি নষ্ট করে ভেড়ি করা যাবে না।’’
শেষ পর্যন্ত ভেড়ির হাত থেকে চাষের জমি বাঁচাতে প্রশাসন কতটা সক্রিয় হয় সে দিকেই তাকিয়ে চাষিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy