Advertisement
E-Paper

ফেরি চালাতে জোয়ারের আশায় রূপনারায়ণ

ছেলেকে নিয়ে তমলুকে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন হাওড়ার শ্যামপুরের প্রৌঢ়া মানু মান্না। তমলুকের স্টিমারঘাট ও হাওড়া জেলার ডিহিমণ্ডল ঘাটের মাঝের রূপনারায়ণ পার হতে দীর্ঘক্ষণ ঘাটে বসেছিলেন তাঁরা।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৫
চর-পাড়ি: দীর্ঘ চর পেরিয়ে নৌকো চাপতে হয় নিত্যযাত্রীদের। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

চর-পাড়ি: দীর্ঘ চর পেরিয়ে নৌকো চাপতে হয় নিত্যযাত্রীদের। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

ছেলেকে নিয়ে তমলুকে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন হাওড়ার শ্যামপুরের প্রৌঢ়া মানু মান্না। তমলুকের স্টিমারঘাট ও হাওড়া জেলার ডিহিমণ্ডল ঘাটের মাঝের রূপনারায়ণ পার হতে দীর্ঘক্ষণ ঘাটে বসেছিলেন তাঁরা। কারণ, রূপনারায়ণের মাঝে জেগে ওঠা বিশাল চর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকা চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথে। তাই জোয়ারের জন্য হাপিত্যেশ করে থাকেন মাঝি থেকে যাত্রী সকলেই। আর যাত্রীদের এই হয়রানির কারণে একশো বছরের বেশি প্রাচীন তমলুক–শ্যামপুর ফেরিঘাটের যাত্রী পারাপার তলানিতে এসে ঠেকেছে।

রূপনারায়ণ নদীর বুকে জেগে ওঠা ওই চরের দাপটে জোয়ারের সময়টুকু ছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময় নৌকায় সরাসরি যাত্রী পারাপার করতে পারে না। ভাটার সময় একটি ফেরি নৌকায় কিছুদূর গিয়ে নদীর মাঝে চরের অংশ হেঁটে পার হয়ে ফের অন্য একটি নৌকায় চেপে পার হতে হয় যাত্রীদের। ফেরি পারাপারের এই সমস্যার জেরে ফেরিঘাটের লিজ থেকে আয়ও বেশ কমেছে তমলুক পুরসভার। তমলুক পুরসভার পরিচালনায় ফেরিঘাটের বার্ষিক লিজ ২০১৫ সালে ছিল ৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা, ২০১৬ সালে সেটা দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকায়। আর চলতি বছরে তার পরিমাণ মাত্র মাত্র ৮০ হাজার টাকা।

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলার মাঝে থাকা রূপনারায়ণ পার হয়ে হাওড়ার শ্যামপুর এলাকার বহু বাসিন্দা তমলুক শহরে আসেন চিকিৎসা, ব্যবসা এমনই নানা কাজে। যাতায়াতের জন্য তমলুক শহরের স্টিমারঘাট থেকে হাওড়ার শ্যামপুরের ডিহি মণ্ডলঘাট পর্যন্ত নৌকায় যাত্রী পারাপারের ব্যবস্থা রয়েছে বহু বছর ধরে। মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে পার হওয়া যায় এই জলপথ। কিন্তু গত ১০-১২ বছর ধরে নদীর বুকে ধীরে ধীরে চর জেগে ওঠায় নদীর স্বাভাবিক জলস্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। পাশাপাশি দুই পারের মধ্যে যাতায়াত করা ফেরি নৌকা চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

বর্তমানে ভাটার সময় নদীর মাঝে প্রায় এক কিলোমিটার চওড়া চর জেগে ওঠায় জোয়ারের সময় মাত্র ঘণ্টা দু’য়েক নদীপথে সরাসরি ফেরি চলাচল করতে পারে। বাকি সময় নৌকায় যাত্রীদের পারাপার করতে হয়ারনির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। নৌকার মাঝি মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘ সারাদিনে সাতবার ফেরি চলাচল হয়। কিন্তু এর মধ্যে শুধু জোয়ারের সময় সরাসরি নদী পার করানো যায়। বাকি সময় তমলুকের দিকে কিছুটা অংশ নৌকায় পার করে চরে পৌঁছে দেওয়া হয়।’’ আর বাকি পথ? হেসে মদনবাবুর উত্তর, ‘‘এরপর চরের অংশে যাত্রীদের হেটে গিয়ে ফের নৌকায় চেপে শ্যামপুরের দিকে ঘাটে পৌঁছাতে হয়।’’

নদী পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন শ্যামপুরের ডিহিমণ্ডল ঘাটের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘‘৩০ বছর ধরে নৌকায় চেপে যাতায়াত করছি। আগে মাত্র ২০ মিনিটে নদী পার হওয়া যেত। এখন দু’বার নৌকায় চেপে ও চরে আধঘণ্টা হেঁটে নদী পার হতে একঘণ্টা লেগে যায়।’’ অনন্তপুর গ্রামের আশুদেব মণ্ডলের কথায়, ‘‘অনেক সময় ভারী মালপত্র নিয়ে নদী পারপার করতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অত ভারী জিনিস নিয়ে হাঁটা যায়, বলুন তো?’’

সমস্যা মেনে নিয়েছেন তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। তিনি বলেন, ‘‘রূপনারায়ণের মাঝে বিশাল চর জেগে ওঠায় ফেরি যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে ফেরিঘাটের লিজ বাবদ আয়ও কমে গিয়েছে। ওই চর ড্রেজিং করানোর জন্য সেচ দফতরের কাছে জানিয়েছি।’’ তবে সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার কল্পরূপ পালের সাফ কথা, ‘‘সমস্যার কথা শুনেছি। তবে চর ড্রেজিংয়ের আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই।’’

Ferry Service Rupnarayan River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy