Advertisement
E-Paper

বিদায়ক্ষণে মুছল বিরোধ, জওয়ানের শেষকৃত্যে বাঁধ ভাঙা আবেগ

এ দিন মেদিনীপুর থেকে বিশাল কনভয়ে সিংপুরে পৌঁছয় শ্যামলের দেহ।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০২:২১
শ্রদ্ধা: ‘গান স্যালুটে’ শেষ বিদায়। রবিবার সবংয়ের সিংপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ

শ্রদ্ধা: ‘গান স্যালুটে’ শেষ বিদায়। রবিবার সবংয়ের সিংপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ

কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত হয়েছেন গ্রামেরই ছেলে, সিআরপি জওয়ান। অখ্যাত গ্রামের কথা শিরোনামে উঠে এসেছে। সেই ভূমিপুত্র শ্যামলকুমার দে-কে রবিবার চোখের জলে শেষ বিদায় জানাল সবংয়ের সিংপুর। স্লোগান উঠল, ‘শ্যামল তোমায় আমরা ভুলছি না ভুলব না’। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বছর সাতাশের এই জওয়ানের শেষকৃত্যে মুছে গেল রাজনীতির বিরোধও।

এ দিন মেদিনীপুর থেকে বিশাল কনভয়ে সিংপুরে পৌঁছয় শ্যামলের দেহ। পথের দু’ধারে অপেক্ষারত মানুষ দু’হাত তুলে শ্রদ্ধা জানান। সিংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছিল শেষ শ্রদ্ধার আয়োজন। সেখানেও থিক-থিকে ভিড়। মাইক হাতে গোটা পর্ব তত্ত্বাবধান করেছেন সাংসদ মানস ভুঁইয়া। পরিজন, গ্রামবাসী থেকে প্রাক্তন সেনাকর্মী, সকলেই শ্রদ্ধা জানান।

আবেগঘন সেই মুহূর্তে কিছুটা তাল কেটেছিল। মানস যখন মাইকে বলেন, “কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের মধ্যে উপস্থিত হবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সম্মানীয় অজিত মাইতি মহাশয়”, তখন ভিড়ের মাঝে চেঁচিয়ে ওঠেন এক যুবক। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে গ্রামবাসীর একাংশও বলেন, “এখানে তৃণমূল-বিজেপি বলবেন না। এখানে সেনা সবচেয়ে বড়। সেনার কথাই বলুন।”

তারপর একেবারে অন্য ছবি। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর লাইনে মিলেমিশে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ দেব, জেলা নেতা অজিত মাইতি, নির্মল ঘোষ থেকে কংগ্রেস নেতা মহম্মদ সইফুল, বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ, সিপিএম নেতা চন্দন গুছাইতরা। গত লোকসভা ভোটে প্রতিপক্ষ ছিলেন দেব, ভারতী ও সইফুল। আর মানসের সঙ্গে ভারতীর ‘লড়াই’ তো ভারতী পুলিশ সুপার থাকার সময় থেকেই। মানস তখন কংগ্রেসে। এখনও দু’জনের অবস্থান রাজনীতির বিরোধী শিবিরেই। এ দিন অবশ্য সে সব দাগ কাটেনি। মানসও বলেছেন, “আমরা সবংয়ের মানুষ রাজনৈতিক ঘৃণা নয়, সম্প্রীতিতে বরাবর বিশ্বাসী। আর বীর শ্যামলের মৃত্যু সিংপুর তথা গোটা সবংকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।”

নির্বিঘ্নেই মিটেছে শ্যামলের অন্ত্যেষ্টি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা পুলিশের গান স্যাল্যুটের পরে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সেখানেই শ্যামলকে শেষবারের জন্য দেখেছেন অসুস্থ মা শিবানী ও বাবা বাদলকুমার দে। বাড়ি লাগোয়া বাস্তু জমিতেই তাঁর শেষকৃত্য হয়। তার আগে গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জানায় সিআরপি। ছিলেন সিআরপি-র আইজি প্রদীপকুমার সিংহ, জেলা পুলিশ সুপার দীনেশকুমার, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ, মহকুমাশাসক বৈভব
চৌধুরী প্রমুখ। দুপুরে এসেছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার শ্যামলের পরিবারকে অর্থসাহায্য দেন। সিআরপি-র আইজি প্রদীপকুমার সিংহ বলেন, “আমরা সবাই ওঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি।”

ছেলেহারা বাদল অবশ্য বলছেন, “আমার একমাত্র সন্তান হারানোর ক্ষতি কোনওদিন পূরণ হবে না। তবে এমন বীর সন্তানের বাবা হতে পেরে আমি গর্বিত।’’

Galwan Valley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy