Advertisement
E-Paper

উন্মাদনা ফেরাল পুর-ফুটবলের ফাইনাল

এক সময়ে মেদিনীপুরে ফুটবল ঘিরে উত্‌সাহের অন্ত ছিল না। প্রথম বিভাগীয়, দ্বিতীয় বিভাগীয় লিগেও গ্যালারি ভর্তি থাকত। খেলা থাকলে এখনও পাড়ায় পাড়ায় চোখে পড়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্তিনা, ব্রাজিলের পতাকা।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩০
চ্যাম্পিয়ন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

চ্যাম্পিয়ন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

এক সময়ে মেদিনীপুরে ফুটবল ঘিরে উত্‌সাহের অন্ত ছিল না। প্রথম বিভাগীয়, দ্বিতীয় বিভাগীয় লিগেও গ্যালারি ভর্তি থাকত। খেলা থাকলে এখনও পাড়ায় পাড়ায় চোখে পড়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্তিনা, ব্রাজিলের পতাকা। তবে ফুটবল ঘিরে পুরনো উত্‌সাহটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। পুরসভা আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অবশ্য দেখিয়ে দিল, শহরে ফুটবল প্রেম মরে যায়নি।

মেদিনীপুরের স্টেডিয়ামে হাজার পনেরো লোক ধরে। শুক্রবার রাতে পুর-ফুটবলের ফাইনাল দেখতে এসেছিলেন হাজার দশেক লোক। মাঠের চার দিকের গ্যালারির তিন দিকই প্রায় ভর্তি ছিল। সমর্থকেরা দু’ভাগে ভাগও হয়ে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন ‘মিনি ডার্বি’! প্রাক্তন ফুটবলার অমিয় ভট্টাচার্যের কথায়, “খেলা দেখে আগেকার কথা মনে পড়ছিল। অনেক দিন পরে শহরের ফুটবল ম্যাচে এত লোক দেখলাম। পুরসভার উদ্যোগটা খুব ভাল।” মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মালেরও বক্তব্য, “অনেক দিন পরে ফুটবল ঘিরে শহরের মানুষের উন্মাদনা দেখলাম।” শহরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের আশ্বাস, “শহরের বুকে হারিয়ে যাওয়া ফুটবল উন্মাদনা ফেরাতে পুরসভা সব রকম চেষ্টা করবে।”

মেদিনীপুর পুরসভার সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে আন্তঃওয়ার্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল শহরে। শুক্রবার রাতে অরবিন্দ স্টেডিয়ামে ফাইনালে মুখোমুখি হয় ১২ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ড। খেলাতে বেশ ঝাঁঝ ছিল। দু’দলের রক্ষণভাগ ছিল শক্তিশালী। তবে পার্থক্য গড়ে দেয় মাঝমাঠ। গোলের কয়েকটি সুযোগও তৈরি হয় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাছে। তবে তারা সে সব কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্য ভাবে। খেলার শুরু থেকে টেনশনে ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর টোটন সাসপিল্লী। তাঁর ওয়ার্ডের দলের ফুটবলারদের মধ্যে কোথাও আত্মতুষ্টিও কাজ করছিল। মাঠে নামার আগে এ নিয়ে সতর্কও করেছিলেন টোটনবাবু। তুলনায় টেনশন-ফ্রি ছিলেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্য। যেন জানতেন, শেষ হাসিটা তিনিই হাসবেন। হলও তাই। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি খাতা খোলে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড। ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেন সুরজ সাউ।

রেফারি ইন্দ্রজিত্‌ পাণিগ্রাহী খেলা শেষের লম্বা বাঁশি যখন বাজালেন, তখন গ্যালারি উত্তাল। রেলিং টপকে মাঠে ঢুকতে শুরু করেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সমর্থকেরা। আগাগোড়া ভাল খেলেও রানার্স ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল ১২ নম্বর ওয়ার্ডকে। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি গেল ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাতে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক বিদ্যুত্‌ বসু বলছিলেন, “খেলায় গতি ছিল। তবে ১২ নম্বর ওয়ার্ড কয়েকটি সুযোগ পেয়েও নেটটা ওপেন করতে পারেনি। ওদের ফিনিসটা ঠিক হচ্ছিল না। খেলায় হার-জিত থাকেই। আরও গোল হলে ভাল লাগত।” ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সমর্থক সন্তু সাহার কথায়, “দলটা ভালই খেলেছে। আরও কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়া উচিত ছিল। তাহলে ওদের ঝটকা দেওয়া যেত। অবশ্য একটা দল কখন দাঁড়াবে, কখন ভেঙে পড়বে, বলা মুশকিল।” ম্যাচের আগে-পরে ছিল আতসবাজি প্রদর্শন। খেলা দেখতে মাঠে এসেছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ প্রমুখ। জেলাশাসক বলছিলেন, “পুরসভার এই টুর্নামেন্ট দেখে খুব ভাল লাগছে। অনেক লোক এসেছেন। এই উত্‌সাহটা দেখার মতো।” পুলিশ সুপারের কথায়, “এত সুন্দর খেলা দেখে খুব ভাল লাগছে। এই খেলার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা বার্তাও পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে যে, খেলাধুলোর মাধ্যমে মেদিনীপুর সমস্ত দিক থেকে এগিয়ে যেতে পারে। তিন-চার বছর আগেও এত বেশি খেলা হত না। এখন প্রতিনিয়ত খেলা হয়।”

ফুটবল ঘিরে উত্‌সাহ-উদ্দীপনা দেখে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে শহরের পুরপ্রধান প্রণব বসু ঘোষণা করে দেন, “প্রতি বছরই এই টুর্নামেন্ট হবে।” স্টেডিয়ামে তখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। গ্যালারিতে বাজছে তাসা। আকাশে আলোর রোশনাই।

football league Municipal medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy