ইলিশ তো বটেই, সেই সঙ্গে সব ধরনের মাছ হুহু করে কমছে রূপনারায়ণ নদে। মৎস্যজীবীরা পড়েছেন সঙ্কটে।
রূপনারায়ণ নদে একটা সময় এর ‘রুপোলি শস্য’ ইলিশের সুনাম ছিল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ কোলাঘাটে আসতেন সেই ইলিশ কিনতে। কিন্তু রূপনারায়ণ তার নাব্যতা হারিয়েছে। এখন ইলিশ দূরের কথা, সাধারণ মাছই মেলে না যথেষ্ট পরিমাণে। তাই এই নদের উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীদের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, ১৫ থেকে ২০ বছর আগে কোলাঘাটে অন্তত ১০০-১৫০ মৎস্যজীবী রূপনারায়ণ থেকে মাছ ধরে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করতেন। গড়ে প্রতিদিনই রূপনারায়ণ থেকে ১০-১৫ কেজি মাছ এক-একটি নৌকায় উঠত। কিন্তু সেই নদে বিশাল চড়া পড়ে যাওয়ার সেটি আর মাছেদের বিচরণ ক্ষেত্র নয়। দিনে দুই থেকে তিন কেজি মাছ তোলাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগে এক-এক জন মৎস্যদীবী বর্ষায় শুধুমাত্র ইলিশ বিক্রি করেই সারা বছরের সংসারের খরচ তুলে নিতে পারতেন। সে সব আজ অতীত। এখন যেটুকু মাছ মেলে তার দাম এমন চড়া যে, সাধারণের নাগালের বাইরে। এখানে নৌকার মাঝির সংখ্যা কমতে কমতে থেকেছে মাত্র ৩০ জনে। আর মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১৫০০ থেকে কমে হয়েছে ১৫০। অনেকেই নৌকা বিক্রি করে পুঁজি নিয়ে শুরু করেছেন অন্য ব্যবসা। মাঝি এবং জেলেরা বলছেন, রূপনারায়ণের নাব্যতা বাড়ানো না গেলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাকি ৩০ টি নৌকাও মাছ তোলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। পুরোপুরি ইতিহাস হয়ে যাবে কোলাঘাটের ইলিশও।
কোলাঘাটের মৎস্যজীবী বাসু খাঁড়া বলেন, ‘‘১০ বছর ধরে রূপনারায়ণে মাছ ধরে খুব ভালভাবে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে যা অবস্থা তাতে সারারাত জেগেও ২০০ টাকার মাছ ধরতে পারি না। নৌকা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে পুকুর ও ঝিলের মাছের ব্যবসা শুরু করেছি।’’ মাঝি প্রশান্ত খাঁড়ার কথায়, ‘‘ইলিশ আর সে ভাবে আসে না। দু’-একটা জালে পড়লেও তাতে আর উপার্জন কতটাই বা হয়? প্রশাসন যদি নদ সংস্কার করে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে না আনে, তা হলে এই পেশা ছেড়ে দিতে হবে।’’
প্রতি বছরই অবশ্য নিয়ম করে ব্লক প্রশাসনের তরফে নদে চারা মাছ ছাড়া হয় বলে জানিয়েছেন কোলাঘাটের বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীরা সঙ্কটে রয়েছেন, এটা ঠিক। কিন্তু একাধিক প্রশাসনিক বৈঠক করেও এখনও রূপনারায়ণের গভীরতা ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়নি। তবে আমরা প্রতি বছরই নদীতে মাছ বাড়াতে চারা মাছ ছাড়ি।’’ (শেষ)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)