Advertisement
১১ অক্টোবর ২০২৪
Flood Situation in South Bengal

প্লাবিত পশ্চিম মেদিনীপুর, দাসপুরে ধসে গেল দোতলা বাড়ি, কেশপুরে মৃত এক, বন্যা পরিদর্শনে মমতা

কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে দাসপুর, ডেবরার মতো অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি। দাসপুরে দোতলা বাড়ি ক্রমে জলে তলিয়ে যাচ্ছে। কেশপুরে মৃত্যু হয়েছে ১০ বছরের শিশুর। পরিদর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৭
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবারই ওই জেলায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘাটালে প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখছেন তিনি। কথা বলছেন পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এবং জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরির সঙ্গে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ ঠিকমতো পৌঁছেছে কি না, খোঁজ নেন তিনি। প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার রাতে মমতা পশ্চিম মেদিনীপুরেই থাকবেন।

কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে দাসপুর, ডেবরার মতো অঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। রাত থেকে জল ঢুকছে গ্রামগুলিতে। দাসপুরে একটি আস্ত দোতলা বাড়ি ক্রমে জলে তলিয়ে যাচ্ছে। বাড়িটির একাংশ ভেঙে পড়েছে। কেশপুরে বন্যা পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছে এক ১০ বছরের শিশুর।

ডেবরায় লোয়াদা সদর ঘাটের মুখে কাঁসাই নদীর বাঁধ উপচে জল ঢুকতে শুরু করেছে গ্রামে। মঙ্গলবার রাত থেকে বালির বস্তা দিয়ে জল ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন স্থানীয়েরা। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। রাতে গ্রামে জল ঢুকে পড়ায় জেগে কাটাতে হয়েছে বহু মানুষকে। ডেবরা থানার পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুরের মতো এলাকাও। দাসপুরে ২ ব্লকের গৌরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর এলাকায় বুধবার জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে দোতলা বাড়ির একাংশ। পলাশপাই খালের বাঁধ ভেঙে ক্রমে ওই বাড়ি জলে তলিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং বাড়ির বাসিন্দা ও জিনিসপত্র সরানোর কাজ চলছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই বাড়ির মালিকের নাম স্বপন প্রামাণিক। দাসপুরে ১ ব্লকের সামাট গ্রামেও কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। একের পর এক বাঁধ ভাঙায় স্থানীয়েরা আতঙ্কিত।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে এই মুহূর্তে ৪৪টি ত্রাণশিবির চলছে। তার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। প্রায় ১০ হাজার ত্রিপল ইতিমধ্যে বিলি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে ধুতি, শাড়ি, চাদরও। জেলাশাসক কাদরি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বন্যাকবলিত এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রশাসনিক স্তরের আধিকারিকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও খোঁজ নিচ্ছেন। বাঁধ মেরামতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বাঁধের কাজ শুরু হবে।’’

কেশপুরে গত মঙ্গলবার জলের তোড়ে এক নাবালক ভেসে গিয়েছিল। পরে তার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আনন্দপুর থানার জগন্নাথপুর এলাকায় ওই নাবালকের বাড়ি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার নাম শেখ গিয়াসউদ্দিন (১০)। মঙ্গলবার দুপুরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছু দূরে বন্যার জল দেখতে গিয়েছিল। সেখানে রাস্তা পারাপার করার সময়ে জলের তোড়ে ভেসে যায় তিন নাবালক। দু’জন সাঁতরে উঠে এলেও ওই শিশুর খোঁজ পাওয়া যায়নি। বুধবার তার দেহ উদ্ধার হয়েছে।

দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার হাওড়া এবং হুগলির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। হুগলি থেকে মেদিনীপুরে যান তিনি। মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে রাতে থাকতে পারেন মমতা। বৃহস্পতিবারও ওই জেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করবেন তিনি। বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকেই দুষেছেন মমতা। ঝাড়খণ্ড থেকে কয়েক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরেও দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত।

ঘাটালে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ঘাটালে আমরা যে পর্যন্ত এসেছি, তার পর আর যাওয়া যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। এ বারে জল বেশি ছাড়া হয়েছে। ২০০৯ সালের পর এত জল আর ছাড়া হয়নি। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলে ডিভিসি ঝাড়খণ্ডকে বাঁচায়। সব জল ছেড়ে দেয়। আমরা এ বারে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আমরা স্তম্ভিত। এটা ‘ম্যান মেড’ বন্যা। বাংলাকে ইচ্ছা করে বঞ্চনা করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পড়ে আছে। রাজ্য সরকার করছে। অন্তত দু’বছর লাগবে কাজটা করতে। দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প।’’

মমতার বক্তব্যকে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী, আপনার এই দোষারোপের খেলা পুরনো হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর এই সময়ে আপনি এই সব কথা বলেন। কিন্তু সত্যিটা হল, আপনার সরকারের সেচ দফতর চূড়ান্ত ব্যর্থ। বর্ষার আগে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। বন্যা আটকাতে বিশ্ব ব্যাঙ্ক পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। ৭৫ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফল কী? এ সব দিক থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা বন্ধ করুন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE