লোকালে হানা আর ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে হাতির দলকে জঙ্গলে আটকে রাখার পরিকল্পনা বহু দিনের। সেই লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ ও বহু অর্থব্যয়ও হয়েছে। তবে কাজে আসেনি প্রায় কিছুই। এখন আবার নতুন করে হাতিকে জঙ্গলে আটকাতে উদ্যোগী হচ্ছে বন দফতর।
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনির ব্লকের আমতলিয়া, কানাইশোল, গদরাশোল— এই তিনটি বিটের বিস্তীর্ণ জঙ্গল এলাকায় হাতির বাসস্থানের জন্য নতুন প্রকল্প নিয়েছে বন দফতর। সেখানে ১৫টি পুকুর খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি পুকুর খনন হয়েও গিয়েছে। সেই সঙ্গে থাকবে হাতির খাওয়ার উপযোগী গাছ। এ জন্য খরচ হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ময়ূরঝর্না প্রকল্পেও প্রায় একই রকম পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদারের কথায়, ‘‘ময়ূরঝর্না প্রকল্প করা গেলে হাতিকে কিছুটা হলেও আটকে রাখা যেত। এ রকম আগেও বহু পরিকল্পনা হয়েছে। লাভ কিছুই হয়নি।’’ বন দফতর সূত্রে খবর, ২০০০ সালের অক্টোবরে দক্ষিণবঙ্গে প্রাথমিক ভাবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের অংশ বিশেষ নিয়ে মোট ৪১৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ময়ূরঝর্নায় ‘এলিফ্যান্ট রিজ়ার্ভ’ তৈরির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল এখনকার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় ও শালবনি ব্লক, পুরুলিয়ার মানবাজার, বাঁকুড়ার সিমলিপাল, তালডাংরা, খাতড়া ও রাইপুর ব্লক এবং ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লক। পরিযায়ী হাতির দলের সংরক্ষণের পাশাপাশি, হাতি-মানুষ সংঘাত কমানোর উদ্দেশ্যেই সেই ময়ূরঝর্না প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
বাম আমলে প্রকল্প এগোয়নি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়ূরঝর্না প্রকল্প বাস্তবায়নে ঝাড়গ্রাম বন্যপ্রাণ শাখা (দক্ষিণ বিভাগ) তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে ওই বন্যপ্রাণ শাখা গঠন ও ময়ূরঝর্না প্রকল্প বাস্তবায়নে বিজ্ঞপ্তিও জারি করে রাজ্য সরকার। তার পরে আবার সব ঠান্ডা ঘরে চলে যায়। এ দিকে বছর-বছর বংশবৃদ্ধির ফলে এখন পরিযায়ী হাতির সংখ্যা তিনশো ছাড়িয়েছে। ঝাড়খণ্ডের দলমায় উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় হাতিরা বছরের বেশির ভাগ সময় ঝাড়গ্রাম জেলার বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। যার পরিণাম, প্রতি বছর হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট, সম্পত্তির ক্ষতি ও মানুষের মৃত্যু।
হাতিদের যাতায়াতের রুটও বদলেছে। হাতিরা এখন ঝাড়খণ্ডের বদলে ওড়িশা হয়ে এ রাজ্যে আসছে। বছরভর খড়্গপুর, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম ডিভিশনে দু’শোর কাছকাছি হাতি থাকছে। তাই হাতিদের জঙ্গলেই রাখতে জামবনি ব্লকের তিনটি বিটের ৪০ হাজার হেক্টরে হাতির থাকার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে ঝাড়গ্রাম ডিভিশন। পুকুর ও পরিখা খননের পাশপাশি হাতির খাবার হিসেবে ঘাস লাগানো হবে। ফাঁকা জাগাগায় লাগানো হবে বট, অশ্বত্থ, বাঁশ গাছ। যেখানে ছোট ছোট গাছ রয়েছে, সেখানে বড় জঙ্গল গড়ে তোলা হবে। এ জন্য খরচ হবে দেড় কোটি টাকা। ইতিমধ্যে টেন্ডার করে কাজ শুরুও হয়েছে। পাশাপাশি ৬০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বেড়া দিতে আরও এক কোটি টাকা খরচ হবে। সেই টাকা এখনও বরাদ্দ হয়নি।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম মানছেন, ‘‘হাতিকে আটকে রাখার জন্য তিনটি বিটের বিস্তীর্ণ জঙ্গল এলাকা জুড়ে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ফলে হাতির বাসস্থানের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা যাবে।’’ আর ময়ূরঝর্না প্রকল্প নিয়ে ডিএফও-র বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধতন মহলে জানানো হয়েছে। সবুজ সঙ্কেত মিললেই ময়ূরঝর্না প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)