দিন কয়েক আগে রোগীদের দেওয়া খাবারে টিকটিকি পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল তমলুক জেলা হাসপাতালে। এ বার, জেলা হাসপাতাল চত্বরে রোগী বহনের জন্য থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে মদের আসর বসানোর ঘটনা সামনে এল।
জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ৫০০ জনেরও বেশি। হাসপাতালের বাইরে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে রোগীর আত্মীয়-পরিজন অপেক্ষায় থাকেন তারও বেশি। ফলে হাসপাতাল চত্বরে সবসময় ভিড় থাকে। এহেন জনবহুল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল চত্বরে রোগী বহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরেই মদ্যপানের আসর বসানোর অভিযোগে পুলিশ চারজনকে চালককে গ্রেফতার করেছে। মদ্যপ চার চালকের গ্রেফতারে প্রশ্ন উঠেছে, এমন চালকদের হাতে রোগী নিয়ে যাওয়া-আসা কতটা নিরাপদ?
বুধবার রাত ১১টা নাগাদ তমলুক থানার পুলিশ হাসপাতাল চত্বরে হানা দিয়ে বার্ন ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে মদের আড্ডা থেকে চারজনকে হাতেনাতে ধরে। পুলিশ জানিয়েছে, চারজনই হাসপাতাল চত্বরে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। খাস জেলা হাসপাতালে এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। হাসপাতাল চত্বরে রোগীর পরিজনদের নিরাপত্তার পাশাপাশি রোগী বহনের জন্য থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের উপর এই ঘটনার পর আর কতটা ভরসা করবেন রোগীর পরিজনেরা, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মীদের একাংশ জানান, হাসপাতালের ভিতরে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৪০ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। হাসপাতাল চত্বরে এক পুলিশ অফিসার-সহ বাহিনী রয়েছে। কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনার পর এখানেও পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তায় যে গাফিলতি রয়েছে তা স্পষ্ট। কয়েকদিন আগেই জেলা হাসপাতালে রোগীদের দেওয়া খাবারে টিকটিকি পাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল।
হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পুলিশ পদক্ষেপ করেছে।’’
জেলা হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫১০ শয্যার জেলা হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকশো রোগী ও তাঁর পরিজনরা আসেন। ভর্তি থাকা রোগীদের পরিজনরা রাতে হাসপাতাল চত্বরে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে থাকেন। জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের কলকাতা-সহ অন্য জায়গার হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স-সহ চালকেরা হাসপাতাল চত্বরে থাকেন। প্রায় ৫০টিরও বেশি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স জেলা হাসপাতালের চত্বরে থাকে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ রাতে হাসপাতাল চত্বরে মদ্যপানের আসর বসাচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ আসছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। বিষয়টি রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে পুলিশের নজরে আনেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপরই বুধবার রাতে পুলিশ আচমকা হসপাতাল চত্বরে হানা দিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে মদের আসর থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে। সকলেই চালক।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর আত্মীয় চণ্ডীপুরের বাসিন্দা দীপঙ্কর মাইতি বলেন, ‘‘রাত-বিরেতে অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্যত্র রোগী নিয়ে যাওয়া সমস্যার। কিন্তু সেই অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরাই যদি মদ খেয়ে থাকেন তাহলে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথেই কোনও দুর্ঘটনা যে ঘটবে না তার ভরসা কোথায়?’’ তিনি সহ অন্য রোগীদের পরিজনদেরও দাবি, অবিলম্বে এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করুক প্রশাসন।
তৃণমূল প্রভাবিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক মাইতি বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে মদ্যপানে জড়িত চালকদের আমরা কখনওই সমর্থন করছি না। এ বিষয়ে পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’
হাসপাতাল চত্বরে সর্বদা পুলিশ থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটল তা নিয়ে জেলার এক পদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ওখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত যে সব পুলিশকর্মী ছিলেন তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’