কোলাঘাটে গণনাকেন্দ্রের কাছে দিব্যেন্দুকে ঘিরে বিক্ষোভ কর্মী-সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র
দুপুরে ২টো। কোলাঘাটের গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তৃণমূল ক্যাম্পের দিকে গাড়িতে এগিয়ে গেলেন তমলুক কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী। ক্যাম্পের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে ধরলেন দলীয় কর্মীরা। ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তাঁরা। দলীয় কর্মীদের একজনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘এসি গাড়ি ছেড়ে এলাকায় ঘুরুন। নইলে এই রকমই ফল হবে।’’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা যত বেড়েছে, কেটিপিপি হাইস্কুলের গণনা কেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল ক্যাম্পে উৎকণ্ঠা তত বেড়েছে। কারণ, তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী দিব্যেন্দুকে কড়া টক্কর দিয়েছেন তমলুক কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্কর। দুপুরের মধ্যে দলের জয় সুনিশ্চিতের সম্ভাবনা সামনে আসলেও জয়ের মার্জিন কমেছে বেশ কিছুটা। পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভা অর্থাৎ কোলাঘাট ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার খবর সামনে আসার পরই ‘ক্ষুব্ধ’ হন এলাকার তৃণমূলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গণনা কেন্দ্রের বাইরে দলীয় প্রার্থীর সমানেই।
এ দিন দুপুর সওয়া ১ টা নাগাদ কেটিপিপি হাইস্কুলের ভোট গণনা কেন্দ্রে পৌঁছন দিব্যেন্দু। ২টো নাগাদ গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল ক্যাম্পের দিকে যায় তাঁর গাড়ি। দিব্যেন্দু গাড়ি থেকে নেমে আসার পরই তাঁকে শুনতে হয় ওই মন্তব্য। অপ্রত্যাশিত ওই ধরনের উক্তিতে কিছুটা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন দিব্যেন্দু। তখন ক্যাম্প থেকে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী ছুটে এসে ওই বিক্ষুব্ধ কর্মীকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। আর সেই সময় ভিড় টপকে ক্যাম্পে ঢুকে যান দিব্যেন্দু। বসে পড়েন চেয়ারে। সেখানে থাকা নেতা- কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।
এদিকে, ওই সময়ই তৃণমূলের আরও কয়েকজন দলীয় কর্মী কোলাঘাটে খারাপ ফলের জন্য কোলাঘাটের তৃণমূল নেতা বিপ্লব রায়চৌধুরীকে দায়ী করে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় পদক্ষেপের আর্জিতে দিব্যেন্দুর সামনে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, বিপ্লব নিজে সমস্ত কর্মীদের বিজেপি’কে ভোট দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেছিলেন। প্রবল চিৎকার চেঁচামেচি শুরুর পরে দ্রুত ক্যাম্প ছাড়েন দিব্যেন্দু।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। এবার রাত ৭টা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে সেই ব্যবধান কমে হয়েছে এক লক্ষ ৮৯ হাজার ৭৪৯।
স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরীর সঙ্গে তৃণমূল নেতা অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্বের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দাবি, দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, ২০১৬ সালে বিপ্লব পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভায় সিপিএমের কাছে হেরে যান। ওই দ্বন্দ্বে রাশ টানতে বিপ্লবকে রাজ্যের ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় চলতি লোকসভা নির্বাচনে বিপ্লববাবুকে তৃণমূলের কোলাঘাট ব্লকের নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। সে জন্য বিপ্লব নীল বাতি লাগানো গাড়ি পান। এ দিন নীল বাতি দেওয়া ওই গাড়ি প্রত্যাহার করারও দাবি ওঠে গণনা কেন্দ্রের বিক্ষোভ স্থলে।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিপ্লব। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ কুৎসিত এবং কুরুচিপূর্ণ। ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেই আমি দলের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ি। পারিবারিক কিছু সমস্যার জন্য মাঝে বেশ কিছু সময় ব্যস্ত ছিলাম। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য আমি মানুষজনকে প্রলুব্ধ করেছি, এ মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।’’ যদিও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি দিব্যেন্দু অধিকারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy