E-Paper

জাঁক ফিরল আইআইটি-র রঙ্গোলিতে

দীপাবলির রাতে খড়্গপুর আইআইটিতে ইলুমিনিনেশন ও রঙ্গোলি উৎসবের আয়োজন করল তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা। আটের দশকে খড়্গপুর আইআইটিতে এই উৎসবের সূচনা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১৯
আইআইটি-র রাধাকৃষ্ণন হলের ইলুমিনেশন। নিজস্ব চিত্র

আইআইটি-র রাধাকৃষ্ণন হলের ইলুমিনেশন। নিজস্ব চিত্র

গত বার উৎসবের আবহে এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যুতে উত্তাল হয়েছিল প্রতিষ্ঠান। নীরবতা পালন করে ঐতিহ্য পালনে ফিকে হয়েছিল জাঁক। এ বার সেই জাঁক ফিরল। তবে বদলাল রীতি। দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ারা নয়, উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের আয়োজনেই ‘ইল্লু’ ও ‘রঙ্গোলি’ উৎসবে উচ্ছ্বাসে ভাসল আইআইটি।

দীপাবলির রাতে খড়্গপুর আইআইটিতে ইলুমিনিনেশন ও রঙ্গোলি উৎসবের আয়োজন করল তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা। আটের দশকে খড়্গপুর আইআইটিতে এই উৎসবের সূচনা হয়। দেশে একমাত্র এই আইআইটিতেই এই উৎসব হয়। মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের তত্ত্বাবধানে ‘ইল্লু’ ও ‘রঙ্গোলি’র পরিকল্পনা, নির্মাণ-সহ যাবতীয় আয়োজন করেন দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ারা। প্রতিটি হলে (হস্টেলে) হয় পৃথক আয়োজন। করোনা কালে ছেদ পড়েছিল। অতিমারির পরে গত বছর এই উৎসব সাড়ম্বরে হওয়ার কথা ছিল। তবে উৎসবের দিন দশেক আগেই মৃত্যু হয় মেক্যানিক্যালের ছাত্র ফয়জ়ান আহমেদের। র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে উত্তাল আইআইটিতে সে বার কোনওরকমে পালিত হয় উৎসব। গত জুনে ইন্টার্নশিপে আসা এক ছাত্রের মৃত্যু হয় রাধাকৃষ্ণন হলে। তারপর ১৮ অক্টোবর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলে মৃত্যু হয় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কিরণ কুমারের।

ইতিমধ্যে র‌্যাগিং রুখতে পৃথক তিনটি স্কোয়াড গঠন করেছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। এ সবের মধ্যে ‘ইল্লু’ ও ‘রঙ্গোলি’ উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে নানা টালবাহানা চলছিল। অংশগ্রহণে রাজি না হওয়ায় দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের উপর চাপ সৃষ্টি না করে প্রথা ভেঙে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারাই করেছেন যাবতীয় আয়োজন। আর তাতে উচ্ছ্বাসে ভেসেছে প্রতিষ্ঠানের সব পড়ুয়ারাই।

দেশের সনাতনী রীতিকে চিত্রকলায় ফুটিয়ে তুলতেই চালু হয়েছিল এই রঙ্গোলি। পরে ইল্লু (ইলুমিনেশন) উৎসব তার জাঁক বাড়িয়েছে। মূলত বাঁশের চাটাই বা খাঁচা তৈরি করে তার ওপরে সমান্তরালভাবে প্রদীপ বসিয়ে আলোর সাজ করা হয় ইল্লুতে। এ বারও আইআইটির ২২টি হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে উৎসব। পরিচালনায় অন্যবারের মতোই ছিল আইআইটি ছাত্র সংসদ ‘জিমখানা’। হয়েছে প্রতিযোগিতাও। কোথাও পৌরাণিক কাহিনী আবার কোথাও সামাজিক সচেতনতার বার্তা থিমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আইআইটির রাধাকৃষ্ণন হলে ইল্লুর থিমে বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কির আবির্ভাব ও কলিযুগের অবসানের চিত্রপট প্রদীপে ফুটিয়ে তোলা হয়। সঙ্গে রঙ্গোলিতে ভেষজ রঙে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল ষড়রিপু। ওই হলের থিম বর্ণনার দায়িত্বে ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্কপ্রভ মণ্ডল। তাঁর কথায়, “এই ইল্লু ও রঙ্গোলি আমাদের প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য। প্রতিবার দ্বিতীয় বর্ষের জুনিয়াররা কাজ করে সিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এখন জুনিয়ররা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। তাই এ বার ওদের সাড়া মেলেনি। আমরা কাউকে জোর করিনি। কিন্তু এই মানসিকতা থাকলে তো ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।”

ফয়জ়ানের মৃত্যুর পিছনে ইলুমিনেশনে যোগদানে চাপের অভিযোগ উঠেছিল। তার পরেই এ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এ বার রাজেন্দ্র প্রসাদ হলের এক দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তুলে ই-মেল করেন। দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ এতে অংশও নেননি। তবে এ সবের ছাপ পড়েনি আড়ম্বরে। আইআইটির জিমখানার সহ-সভাপতি চতুর্থ বর্ষের সমর্থ সিংহ বলেন, "জিমখানার সহ-সভাপতি হিসাবে পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতিটি হলের পড়ুয়াদের যে সমন্বয় দেখলাম তাতে আপ্লুত।"

এ বার ইল্লুমিনেশনে তৃতীয় হয়েছে রাধাকৃষ্ণন হল, দ্বিতীয় লালা লাজপত রাই হল। আর প্রথম স্থানে থাকা সিস্টার নিবেদিতা হলের থিম ছিল নারীরাই সৃষ্টির আদি শক্তি। সেখানে ইল্লুতে দেখানো হয়েছে নারীর গর্ভে পৃথিবী। সঙ্গে ছিল পৃথিবীর পঞ্চতত্ত্ব। আয়োজক দলে থাকা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রীতি সাহা বলেন, “২০দিনে থিম করে প্রথম হলাম। দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ারাও আনন্দ করল। এটাই সাফল্য।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kharagpur iit Kharagpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy