Advertisement
E-Paper

হাজিরা দেখছে যন্ত্র, সাড়ে ন’টায় দফতরে সরকারি কর্মী

মহকুমাশাসক মানছেন, “এখন হাজিরা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।” 

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১০
ভোলবদল: বায়োমেট্রিক হাজিরা মেদিনীপুর কালেক্টরেটে। নিজস্ব চিত্র

ভোলবদল: বায়োমেট্রিক হাজিরা মেদিনীপুর কালেক্টরেটে। নিজস্ব চিত্র

‘বারোটায় অফিস আসি, দু’টোয় টিফিন/ তিনটেয় যদি দেখি সিগন্যাল গ্রিন/ চটিটা গলিয়ে পায়ে, নিপাট নির্দ্বিধায়, চেয়ারটা কোনওমতে ছাড়ি...’

সরকারি কর্মচারীর রোজনামচা নিয়ে নচিকেতার এই গানে কর্মসংস্কৃতির ছবিটা বেআব্রু হয়েছিল বহু দিন আগেই। সরকারি দফতরে একাংশ কর্মীর এমন গয়ংগচ্ছ মনোভাবে মানুষের হয়রানি, কাজ না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ জমেছিল বিস্তর।

ছবিটা এ বার পাল্টাচ্ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক দফতর কালেক্টরেটে যেমন যে কর্মী সকাল এগারোটার আগে অফিসে ঢুকতেন না, এক মাস হল তিনিই সকাল সাড়ে ন’টায় হাজির! এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এত দিন ওই কর্মীকে সতর্ক করেও লাভ হয়নি। দিন কয়েক আগে তিনি তাই ওই কর্মীকে ডেকে জানতে চান কেন হঠাৎ তাড়াতাড়ি অফিসে আসা! কর্মী জবাব দেন, ‘‘আসলে যন্ত্রে হাজিরা তো। দেরিতে এলে যদি গরহাজির দেখায়!’’

গত ১ অগস্ট থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হয়েছে মেদিনীরপুর কালেক্টরেটে। ভোলবদল তারপরই। কালেক্টরেটের বিভিন্ন দফতরে প্রায় চারশো কর্মী কাজ করেন। খোদ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহনগাঁধীও মানছেন, “এখন সকলেই নিয়মিত অফিসে আসছেন।” কালেক্টরেট চত্বরে রয়েছে মেদিনীপুর (সদর)-এর মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষের দফতর। দফতরে কর্মী সংখ্যা প্রায় তিরিশ। মহকুমাশাসক মানছেন, “এখন হাজিরা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।”

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের বক্তব্য, সরকারি কর্মীদের দায়িত্ববোধ বাড়াতেই এই বন্দোবস্ত। সাধারণত, বায়োমেট্রিকে আঙুলের ছাপ দিতে হয়। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, অনেক কর্মী এতে বেঁকে বসেছিলেন। কারও কারও মন্তব্য ছিল, ‘আঙুলের ছাপ দেব কেন!’ সব দিক দেখে যন্ত্রে ছবি তোলার ব্যবস্থা রাখা হয়। যন্ত্রের সামনে দাঁড়ালেই ছবি ওঠে, হাজিরার রেজিস্টারে সময়ও নথিভুক্ত হয়ে যায়।

কিন্তু কর্মীরা সময়ে দফতরে এলেই তো আর হল না, তাঁদের কাজটাও তো করতে হবে! সেটা হচ্ছে কি!

নানা কাজে বিভিন্ন সরকারি দফতরে যেতে হয় সোমনাথ দাসকে। তাঁর অবশ্য দাবি, “একাংশ কর্মী দায়িত্বশীল নন। সমস্যাটা সেখানেই। দিনের পর দিন ফাইল ফেলে রাখেন। সেই পরিস্থিতি এখনও খুব একটা বদলায়নি।” একই মত বিপ্লব মাহাতোর। তাঁর কথায়, “এটা ঠিক, আগে সময় মতো হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কর্মীদের কাজের প্রতি যত্নবান হতে হবে।” আরেকজনের কটাক্ষ, “যাঁরা কাজ করার তাঁরা করেন। আর যাঁরা ফাঁকি মারার তাঁরা ফাঁকিই মারেন!” যা শুনে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, “সব সমস্যার সমাধান একদিনে হয় না।”

তবে যন্ত্রে হাজিরাকে সমর্থন করছে কর্মী সংগঠনও। তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক অনুপ মান্না বলেন, “পরিষেবা নিয়ে কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হতেন। কর্মীদের কারও কারও অনিয়মিত হাজিরার ফলেই হয়তো এটা হত। বায়োমেট্রিক চালুর ফলে কর্মসংস্কৃতি ফিরেছে।”

Attendance Government Employee Bio-Metric
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy