Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কড়াকড়ি নয়, ইটভাটার বৈধতার পথ খুঁজছে সরকার

বন্ধের নোটিস পাঠিয়েও অন্য পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। গ্রিন ট্রাইব্যুনালের রায় মেনে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার সেই অবৈধ ইটভাটাকেই বৈধতা দিতে চাইছে তারা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইটভাটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। তার মধ্যে সরকারি খাতায় নাম রয়েছে মাত্র ২১২টি ভাটার। তার মধ্যে আবার কেবলমাত্র ৭টি ভাটা বৈধ। বাকি ২০৫টি ভাটায় অবৈধ! যে সব ভাটা সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা মুানাফা লুটেছে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০০:১৫
Share: Save:

বন্ধের নোটিস পাঠিয়েও অন্য পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। গ্রিন ট্রাইব্যুনালের রায় মেনে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার সেই অবৈধ ইটভাটাকেই বৈধতা দিতে চাইছে তারা।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইটভাটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। তার মধ্যে সরকারি খাতায় নাম রয়েছে মাত্র ২১২টি ভাটার। তার মধ্যে আবার কেবলমাত্র ৭টি ভাটা বৈধ। বাকি ২০৫টি ভাটায় অবৈধ! যে সব ভাটা সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা মুানাফা লুটেছে।

সরকারের যুক্তি এই সব ভাটাগুলিকে বৈধতা দিলে সরকারি রাজস্ব অন্তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ইটভাটার মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে ভাটার বৈধতা নিয়ে সচেতন করা হবে। উপস্থিত থাকবেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরা। ওই বৈঠকেই ভাটা মালিকদের আবেদনপত্র দেওয়া হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার ভাটামালিকদের নিয়ে বৈঠকও হয়ে গিয়েছে।

জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্তের কথায়, “গ্রিন বেঞ্চের নির্দেশ মেনেই আমরা অবৈধ ভাটাগুলিকে বন্ধের নোটিস ধরিয়েছিলাম। এ বার সমস্ত ভাটাকে আইন মেনে চলার জন্য কী করা প্রয়োজন তা বোঝানো হচ্ছে।’’ কিন্তু তাতে যদি কাজ না হয়? অরিন্দমবাবু কথায়, ‘‘তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

প্রশাসনিক কর্তারাও সতর্ক, তাঁদের বক্তব্য, বেশি কড়াকড়ি করলে অনেক ভাটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বহু মানুষ কর্মহীন হবেন। আবার সরকারি কোনও বিকল্পের ব্যবস্থাও হয়নি এখনও। এ রাজ্যে এখনও সম্পূর্ণ ছাই দিয়ে ইঁট তৈরি সে ভাবে শুরু হয়নি। হলেও বিপুল পরিমাণ ছাই মিলবে না। তাই একটু নরম হয়েই ইঁটভাটাগুলিকে বৈধতা দিয়েই যাতে চালানো যায় সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ডস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের জেলা সম্পাদক জ্যোতিপ্রকাশ হোড় বলেন, “আমরাও চাই সকলে আইন মেনে চলুক। তাতে সকলের মধ্যে সমান প্রতিযোগিতা হবে।’’ তাঁর কথা অনুযায়ী এতদিন বেআইনি ভাটা মালিকরা সেল ট্যাক্স, ভ্যাট-সহ বিভিন্ন কর দিতেন না। ফলে প্রতিযোগিতায় তাঁরা এগিয়ে যেতেন।

সাধারণত ইটভাটা তৈরি করতে গেলে হলদিয়ায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নিতে হয়। এই ছাড়পত্র পেলেই ছাড়পত্র দিয়ে দিত জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। কেবলমাত্র ইট তৈরির প্রয়োজনীয় মাটির উপর কর নেওয়া হত।

কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায়, কোনও ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠছে একের পর এক ভাটা। বহু ইটভাটা রয়েছে যা রায়তি জমির উপর তৈরি নয়। নদীর চরে, সরকারি খাস জমিতে দেদার গড়ে উঠেছে ভাটা।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমোদন নেই তাদের। সে ক্ষেত্রে রয়েছে করের ফাঁক। সরকার অনুমোদিত ভাটাতে বছরে আড়াই লক্ষ সিএফটি মাটি কাটার কর নেওয়া হয়। সেস-সহ ১০০ সিএফটি মাটি কাটলে দিতে হয় পরিমাণ ৬৬ টাকা। কিন্তু সম্পূর্ণ বেআইনি ভাটাগুলির জন্য বছরে ২ লক্ষ ৭০ হাজার সিএফটি মাটি টাকার কর নেওয়া হয়। ১০০ সিএফটিতে সেস-সহ তার পরিমাণ ৯৪ টাকা। চলতি আর্থিক বছরে এই দর তৈরি করা হয়েছে।

এই কিছুটা অতিরিক্ত কর দিয়েই বেআইনি ভাটাগুলি বৈধতা পেয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গ্রিন বেঞ্চের নির্দেশের পর সকলকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত ইটভাটা ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র নবীকরণ করেনি তাদের বছরে নবীকরণবাবদ ৫০০ টাকা ও ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। ২০০৮ সালের পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হলে বছরে ১ হাজার টাকা ও দশ শতাংশ জরিমানা। এই টাকার পরিমাণ অবশ্য এমন কিছু নয়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জমি নিয়ে।

দেখা যায়, বেশিরভাগ ভাটাই মালিকের রায়তি জমিতে নয়। আবার রায়তি জমিতে ভাটা মালিক হয়তো তার চরিত্র পরিবর্তন করেনি। ইটভাটার জমিকে বাধ্যতা মূলক ভাবে ইটখোলাতে রূপান্তরিত করতে হয়। তবে তার জন্যও খরচ হয় বেশ খানিকটা। তাই অনেকেই সে পথে হাঁটেন না।

কিন্তু কড়াকড়ির পথে না গিয়ে সরকার কেন ‘বৈধতা’ দিতে চাইছে কেন?

ইঁটভাটা মালিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সহ-সভাপতি জ্যোতিপ্রকাশ হোড়ের অনুমান, “রাজ্যে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ভাটাতে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। এ রাজ্যে একটি ক্ষেত্রে এত বিপুল কর্মসংস্থান আর দ্বিতীয় নেই। হয়তো তাই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ জ্যোতিপ্রকাশবাবুর বক্তব্য তাঁরাও সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আবার এ কথাও তিনি স্বীকার করেন প্রশাসনিক উদাসীনতাতেই এতদিন অবৈধ ভাটা চলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brickfields legalize CFT soil green bench
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE