বিদ্যাসাগর হলে কর্মিসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী।— নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে ছেদ পড়ছে না। শনিবার মেদিনীপুরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সভায় খড়্গপুর শহরের নেতাদের অনুপস্থিতি নতুন জল্পনা উস্কে দিয়েছে। তাহলে কি পুরবোর্ড গঠন নিয়ে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখনও চাপা অসন্তোষ থেকে গিয়েছে, উঠছে প্রশ্ন। অবশ্য জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, রেলশহরে এ দিন দলের উদ্যোগে এক রক্তদান শিবির ছিল। তাই অনেকে সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি। রেলশহরের নেতৃত্বেরও একই দাবি।
যদিও এতে জল্পনা থামছে না। প্রশ্ন উঠছে, শিবিরে থাকার জন্য খড়্গপুরের সব কাউন্সিলর সুব্রতবাবুর একযোগে সভায় অনুপস্থিত থাকলেন কেন। কয়েকজন তো আসতে পারতেন। তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এ নিয়ে আলোচনাই অযৌক্তিক। তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “প্রয়াত মানস চৌবের স্মরণে রক্তদান শিবির ছিল। শহরের সকলে এখানেই ছিলেন। তাই হয়তো সময়ে মেদিনীপুর পৌঁছতে পারেননি। আমরা ১৫ বছর ধরে এই শিবির করছি।” জেলা তৃণমূলের দুই কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ এবং নির্মল ঘোষেরও দাবি, “রক্তদান শিবিরের জন্যই খড়্গপুরের অনেকে সময়ে মেদিনীপুরে পৌঁছতে পারেননি। এ নিয়ে জল্পনা- কল্পনার কিছু নেই।”
এ দিন ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রস্তুতি সভা ছিল মেদিনীপুরে। সভায় উপস্থিত থাকতে শহরে আসেন সুব্রত বক্সী। সভা শুরু হওয়ার কিছু পরেই অবশ্য সভাস্থলে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়। কেন খড়্গপুর শহরের পরিচিত কোনও নেতা- কর্মীকে আশপাশে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, গুঞ্জন শুরু হয় সেই নিয়েই। সদ্য জেলায় ৬টি পুরবোর্ড গঠন হয়েছে। এদিন নবনির্বাচিত পুরপ্রধানদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করেন সুব্রতবাবুই।
অন্যরা থাকলেও সংবর্ধনার সময় উপস্থিত ছিলেন না রেলশহরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার কিংবা উপপুরপ্রধান শেখ হানিফ। সভাস্থলের গুঞ্জন কাছে পৌঁছয় জেলা নেতৃত্বের। তাঁরা শহর নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অন্তত, কাউন্সিলরদের মেদিনীপুরে পাঠানোর পরামর্শ দেন। আসলে অন্য দল ভাঙিয়ে পুরবোর্ড গঠন করলেও খড়্গপুরে স্বস্তিতে নেই শাসক দল। পুরনোদের একাংশ সুযোগ পেলেই সুর চড়াচ্ছেন বলে দলের এক সূত্রে খবর। খড়্গপুর পুরসভার পুরপ্রধান হিসেবে ‘নতুন মুখ’ প্রদীপ সরকারের নাম ঘোষণা করেন শাসক দলের নেতৃত্ব। জহরলাল পাল-দেবাশিস চৌধুরীর ‘দ্বন্দ্ব’ এড়াতে পুরপ্রধান হিসেবে ‘নতুন মুখ’ তুলে আনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন পুরনো কাউন্সিলরদের একাংশ। পরে উপ-পুরপ্রধানের পদে শেখ হানিফ, পুরপারিষদ কাউন্সিলর ইন-চার্জের পদে পূজা নায়ডু, জগদম্বা গুপ্ত, বেলারানি অধিকারীদের নাম ঘোষণার পর অসন্তোষ দেখা দেয়। অবশ্য পরিস্থিতি বুঝে তিনবারের জয়ী কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তুষার চৌধুরীকে পূর্ত বিভাগের পুর-পারিষদ করে পুরনোদের অসন্তোষ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে শাসক দল।
এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ প্রস্তুতি সভা শুরু হয়। শেষ হয় বেলা একটা নাগাদ। বেলা দেড়টা নাগাদ উপপুরপ্রধান শেখ হানিফ সহ দলের কয়েকজন কাউন্সিলরকে নিয়ে সভাস্থলে হাজির হন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। ততক্ষণে অবশ্য সুব্রতবাবু কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। মেদিনীপুরে এসে রেলশহরের পুরপ্রধান প্রদীপবাবুও দাবি করেন, “দলে কোনও কোন্দল নেই। কেউ কেউ কুত্সা-অপপ্রচার করছে।” এ দিনের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতি, জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ, অজিত মাইতি প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy