Advertisement
E-Paper

বিয়ে দেব না, স্কুল ছাড়াব না, অঙ্গীকার অভিভাবকদের

গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া চক্রের রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ৩০ জন অভিভাবক স্কুলের দেওয়া অঙ্গীকারপত্রে সই করে তাঁদের সন্তানদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
এই অঙ্গীকারপত্রেই সই করেন অভিভাবকেরা। নিজস্ব চিত্র

এই অঙ্গীকারপত্রেই সই করেন অভিভাবকেরা। নিজস্ব চিত্র

স্কুল ছুট হবে না। মেয়ের কম বয়সে বিয়ে দেব না। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানোর আগে এমনই অঙ্গীকার করতে হচ্ছে অভিভাবকদের। গড়বেতা ১ ব্লকের আমলাগোড়া চক্রের রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ৩০ জন অভিভাবক স্কুলের দেওয়া অঙ্গীকারপত্রে সই করে তাঁদের সন্তানদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন।

আমকোপা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কৃষিপ্রধান এই এলাকায় দিনমজুর, খেতমজুর পরিবারের বসবাস বেশি। ছেলেমেয়েরা মাঝপথে লেখাপড়া বন্ধ করে রোজগার শুরু করে। রয়েছে নাবালিকা বিয়ের প্রবণতাও। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এই এলাকায় প্রাথমিকে স্কুলছুটের হার ২০ শতাংশের বেশি। এই প্রবণতা আটকাতে রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এ বার স্কুলে ভর্তি করানোর সময় অভিভাবকদের কাছ থেকে ছাপানো অঙ্গীকার পত্রে সই করিয়ে নিচ্ছেন। প্রধানশিক্ষক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভাব- অনটনে অনেকে রোজগারের নেশায় স্কুলছুট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে কোনও কারণ ছাড়াই মাঝপথে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই একেবারে গোড়ায় অর্থাৎ প্রাথমিক স্তরে যদি অভিভাবকদের সচেতন করানো যায় সে ক্ষেত্রে কিছুটা কাজ দিতে পারে বলে এ ধরনের প্রয়াস।’’

অঙ্গীকার পত্রে লেখা রয়েছে— ‘এই বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় ছেলে/ মেয়ে কেউই স্কুল ছাড়তে পারবে না। সেইসঙ্গে সরকারি বিধি বা সামাজিক সুরক্ষার খাতিরে নাবালক / নাবালিকার বিয়েতে কোনও অবস্থাতেই সম্মত হব না’। নীচে তারিখ সহ অভিভাবক বা অভিভাবিকার স্বাক্ষর। স্কুলের সহ শিক্ষক রঞ্জিত মণ্ডল ও সৌমেন দাস বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা অঙ্গীকারপত্রটি নিজেরা পড়ে হাসিমুখেই সই করে সেটি প্রধানশিক্ষকের কাছে জমা দিচ্ছেন। কেউ না বুঝতে পারলে আমরা অনেকসময় বুঝিয়ে দিচ্ছি স্কুলছুট বা অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়া কেন উচিত নয়।’’ বৃহস্পতিবার ছেলেমেয়েকে এই স্কুলে ভর্তি করাতে এসেছিলেন সুমন্ত কুণ্ডু, টুম্পা দাসেরা। তাঁরা স্কুলের দেওয়া অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করে বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের ভালর জন্যই স্কুল থেকে সই করিয়ে নিচ্ছে। ভালই হবে।’’ সুবল লোহার, বিভা ঘোষ সহ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘‘আমাদের ভুলের খেসারত দেয় ছেলেমেয়েরা। এখন পড়াশোনা করলে সরকারি কত সুবিধা পাওয়া যায়। আমাদের মতন কী ওদেরও ভবিষ্যৎটা নষ্ট হবে! স্কুল এটা ভাল করেছে।’’

রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছে প্রশাসনও। গড়বেতা ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ ধীবর বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ ও স্কুলছুট প্রতিরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগকে ব্লকের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। অভিভাবকরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও সচেতন হবেন।’’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ খুবই ভাল। বর্তমান সময়ে মানুষের পক্ষে খুব দরকার। ওই স্কুলের মাষ্টারমশাইদের ধন্যবাদ জানাব। এই উদ্যোগের ফলে অভিভাবকেরাও যাতে সচেতন হন তার জন্য অনুরোধ করব।’’

Child Marriage School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy