E-Paper

শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি ফুল, ধান চাষে

বৃষ্টিতে মূলত ক্ষতি হয়েছে পাপড়ি যুক্ত ফুল ও ধানের। রবি মুরসুমে দুই ব্লক জুড়ে অন্তত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে এ বার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ ০৯:০৪
নুইয়ে পড়েছে ফুলের গাছ।

নুইয়ে পড়েছে ফুলের গাছ। নিজস্ব চিত্র।

দুই ব্লকেই চাষ হয় ফুল, আনাজ এবং ধানের। রবিবারের শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ে আংশিক ক্ষতি হয়েছে সেই সব চাষে।

বসন্তের তীব্র রোদের মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লক জুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। পাঁশকুড়ার মাইশোরা, কেশাপাট, হাউর ও ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কোলাঘাটের সিদ্ধা, দেউলিয়া, পানশিলা, সাগরবার এলাকায় শিলাবৃষ্টিও হয়। অন্তত ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের বড় বড় শিলা পড়ে ওই সব এলাকায়। এই দুই ব্লকই কৃষি নির্ভর এলাকা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুল উৎপাদন হয় এখানে।

বৃষ্টিতে মূলত ক্ষতি হয়েছে পাপড়ি যুক্ত ফুল ও ধানের। রবি মুরসুমে দুই ব্লক জুড়ে অন্তত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে এ বার। মুরসুমের প্রথমেই অধিকাংশ কৃষক ধানের চারারোপণ করেছিলেন বলে সেগুলিতে ইতিমধ্যে শিস এসে গিয়েছে। এই সময় প্রবল শিলাবৃষ্টি হওয়ায় সেই শিস ভেঙে গিয়েছে। ফলে কৃষকরা ফসল না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন। কোলাঘাট ব্লকের ধান চাষি রাজীব কর তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘শিলাবৃষ্টির ফলে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা জমির অধিকাংশ ধানের শিস ভেঙে যাওয়ায় ফসল না পাওয়ার আশঙ্কা করছি।’’

দুই ব্লকে প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে গাঁদা, গোলাপ, দোপাটি ও চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ রয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফুল চাষিরাও। গোলাপের কুড়ি ও অন্য ফুলের ওপর শিল পড়ে ভেঙে গিয়েছে সেগুলি। ফলে নতুন ফুল পেতে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ফুলগুলি কেটে ফেলে দিতে হবে কৃষকদের। উৎপাদিত ফুল বাজারজাত না হওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরাও। মাইশোরার কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল বাসুলি রবি মুরসুমে তাঁর দু’বিঘার মতো জমিতে চাষ করেছেন গোলাপ ও গাঁদা ফুলের। শিলাবৃষ্টির ফলে যেমন গোলাপের কুড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনই গাঁদা ফুলের গাছও ভেঙে গিয়েছে। ফলে নতুন করে শ্রমিক লাগিয়ে গাছ কাটতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘খারিফ মরসুমে ক্ষতিপূরণের জন্য কৃষি দফতরে আবেদন জানিয়েছিলাম। এখনও টাকা পাইনি। এখন ফের শিলাবৃষ্টির কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফুল চাষে। কী করে লাভের মুখ দেখব!’’

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের শস্য বিমার আওতায় এনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য জেলা কৃষি দফতরে অভিযোগ জানিয়েছে চাষিদের সংগঠন ‘কৃষক সংগ্রাম পরিষদ’। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘একের পর এক দুর্যোগের কারণে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লকের কৃষকরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষি দফতরের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা উচিত।’’

সোমবার সকাল থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কৃষি আধিকারিকরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছেন। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তীর্থঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিসংখ্যান এলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

এদিকে ঝড়ের কারণে গাছ ভেঙে পড়ায় রবিবার থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে পাঁশকুড়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকায়। ঝড়ের সময় মেদিনীপুর খাল লাগলো বাহারগ্রাম ও সূরানানকার গ্রামে বিদ্যুতের তারের উপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। কেশাপাট পঞ্চায়েতের যশোড়া এলাকাতেও গাছ ভাঙে বিদ্যুতের তারে। তাতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা ওই সব এলাকায় ছিন্ন হয়। রবিবারই বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা পরিদর্শন করলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিক জানান, দ্রুতই নতুন তার লাগিয়ে পুনরায় সংযোগ দেওয়া হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy