অতিমারী পর্বের পরে আচমকাই বেড়েছিল অল্পবয়সিদের হার্টের রোগে মৃত্যুর ঘটনা। কেউ কেউ সেই দু’টি ঘটনার মধ্যে একটি সূত্রও খুঁজে বার করেছিলেন। তাঁরা বলতে শুরু করেছিলেন, অল্পবয়সিদের হার্ট অ্যাটাকের নেপথ্যে কারণ কোভিডের টিকা, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা না করেই গোটা দেশের মানুষকে দেওয়া হয়েছে। শুনে আতঙ্কিত হয়েছিলেন দেশবাসী। অবশেষে জল আর দুধ আলাদা হল। অতিমারী পরবর্তী কমবয়সিদের মৃত্যুর একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আনল এমস, যা দেখে বোঝা যাবে, অল্পবয়সিদের মৃত্যুর আসল কারণ কী!
মাস কতক আগেই কোভিড টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হার্ট অ্যাটাকের কথা বলেছিলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তাঁর রাজ্যেরই একটি জেলা হাসনে আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ সবই আসলে কোভিড টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। ওই টিকার ভাল মন্দ বিচার না করেই তা তাড়াহুড়ো করে দেশের মানুষকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কে বলতে পারে ওই টিকার জন্যই হয়তো এত মৃত্যু হচ্ছে। হাসনে তখন এক মাসে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। তাঁদের অধিকাংশেরই বয়স ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সমীক্ষা করে দেখার কথাও বলেছিলেন সিদ্দারামাইয়া। সেটি জুলাই মাসের ঘটনা। পাঁচ মাস পরে এই বিষয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করল দিল্লির এমস।
টিকা থেকে হার্টের রোগ! কী বলছে সমীক্ষা?
সমীক্ষাটি অবশ্য চালানো হয়েছে গত এক বছর ধরে। তাতে দেখা গিয়েছে, কোভিড পরবর্তী সময়ে ১৮-৪৫ বছর বয়সিদের মৃত্যুর কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। এমস জানিয়েছে, হার্ট অ্যাটাকের জন্য মৃত্যু হয়েছে ৪২.৬ শতাংশেরই। তবে তার বাইরে প্রতি পাঁচ জনে ১ জনের অর্থাৎ ২০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ফুসফুসের রোগ থেকে। ২০ শতাংশের মৃত্যুর সঠিক কারণ বোঝা যায়নি। ৬.৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে খাদ্যনালী এবং অন্ত্রের রোগে। ৪.৩ শতাংশ মারা গিয়েছেন জেনিটো-ইউরিনারি রোগে। মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের রোগেও ৩.২ শতাংশ কমবয়সির মৃত্যু হয়েছে অতিমারী পরবর্তী সময়ে।
এঁরা প্রত্যেকেই কী কোভিড টিকা নিয়েছিলেন?
যে সমস্ত অল্পবয়সিদের হঠাৎ মৃত্যু হয়েছে, দেখা গিয়েছে তাঁদের মধ্যে কোভিড হয়েছিল ৪.৩ শতাংশের। এ ছাড়া টিকা নিয়েছিলেন ৮২.৮ শতাংশ। তবে গবেষকদের তথ্য বলছে, এই মৃতদের মধ্যে যাঁদের কোভিড হয়েছিল বা যাঁরা কোভিড টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যেই কোনও একটি বিশেষ রোগ বেশি হয়েছে বলে দেখা যায়নি।
কী বলছেন গবেষকেরা?
এমসের প্যাথোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং এমসের চিকিৎসক সুধীর আরাভা বলছেন, ‘‘আমরা গত এক বছর ধরে হঠাৎ মৃত্যু হওয়া অল্পবয়সিদের একটি বড় অংশের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। যেহেতু যাঁরা কোভিড টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কোনও একটি রোগ বেশি হয়েছে বলে দেখা যায়নি, তাই কোভিড টিকার জন্যই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে বা অন্য কোনও রোগ হচ্ছে, তা বলা যাবে না।’’ কোভিড টিকা নেওয়ার পরে শারীরিক অসুস্থতার ঘটনাও বিশেষ ঘটেনি। তবে চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ যে সমস্ত মৃত্যুর ঘটনা আমরা পরীক্ষা করেছি, তার মধ্যে কেবলমাত্র একটি ক্ষেত্রে হার্টের পেশিতে প্রদাহ হয়ে মায়োকার্ডাইটিসের ঘটনা ঘটেছিল।’’