Advertisement
E-Paper

হেমন্তের মুখেও আদিবাসী বঞ্চনা

ভিড়ে ঠাসা সভায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত ছাড়াও সে রাজ্যের একাধিক বিধায়ক, মন্ত্রী-সহ জেএমএম-এর শীর্ষ নেতারা হাজির ছিলেন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৫
ঝাড়গ্রাম শহরের জনসভায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন হেমন্ত সরেন।  ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ঝাড়গ্রাম শহরের জনসভায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন হেমন্ত সরেন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

আদিবাসীদের পুরনো আবেগ উস্কে এ বার বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে শক্তি পরীক্ষায় নামছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের উপস্থিতিতে তারই তোড়জোড় শুরু করে দিল শিবু সরেনের দল।
আদিবাসী-মূলবাসীদের স্বার্থে বাংলার পশ্চিমাঞ্চলকে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা ও কেন্দ্রশাসিত পরিষদ গড়া-সহ ১৭ দফা দাবিকে সামনে জেএমএম-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে ঝাড়গ্রাম শহরের জামদা সার্কাস মাঠে জনসভা হয় এ দিন। ভিড়ে ঠাসা সভায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত ছাড়াও সে রাজ্যের একাধিক বিধায়ক, মন্ত্রী-সহ জেএমএম-এর শীর্ষ নেতারা হাজির ছিলেন। হেমন্ত সরেন আগাগোড়া বিজেপির সমালোচনা করেন। আদিবাসীদের প্রতি বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দাবিতে তাঁর বাবা শিবু সরেনের আন্দোলনের সময় বাংলার এই এলাকার মানুষেরও অবদান ছিল বলেও দাবি করেন হেমন্ত।
বিকেল ৩টায় কপ্টারে রাঁচি থেকে ঝাড়গ্রাম হেলিপ্যাড মাঠে পৌঁছন হেমন্ত। পরে গাড়িতে কড়া নিরাপত্তায় পৌঁছন সভাস্থলে। হেমন্ত মঞ্চে বসে থাকাকালীনই ঝাড়খণ্ডের পরিবহণ মন্ত্রী চম্পাই সরেন, বিধায়ক সমীর মহান্তি, জেএমএম-এর কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি হিদায়েত খান, বিধায়ক রামদাস সরেন, প্রাক্তন মন্ত্রী দুলাল ভুঁইয়া, জেএমএম-এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্যরা বক্তৃতা করেন। সকলেই বিজেপির সমালোচনা করেন। সুপ্রিয় বলেন, ‘‘আদিবাসী-মূলবাসীদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য নির্বাচনে যেতে হবে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় প্রার্থী দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বৃহত্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাংলার সীমানা এলাকার অন্তর্ভুক্তির দাবিকে নতুন মোড়কে হাজির করতে চাইছে জেএমএম। সাতের দশকে ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চা তৈরি করে আদিবাসীদের শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন শিবু সরেন। ‘দিশম গুরু’ হিসেবে খ্যাত শিবু ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের প্রধান নায়ক। পরে ২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড আলাদা রাজ্য হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলি প্রস্তাবিত বৃহৎ ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে ঝাড়খণ্ড রাজ্য হওয়ার পরে শিবু ঝাড়গ্রামে এসে জানিয়েছিলেন, বাংলার এই এলাকাকে বৃহৎ ঝাড়খণ্ডে অন্তর্ভুক্তির জন্য লড়াই চলবে।
বিগত বেশ কয়েকটি বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে জেএমএম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছে। ক্রমে জেএমএম সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন জঙ্গলমহলে সংগঠন ঢেলে সাজা হয়েছে। এ রাজ্যের রাজনৈতিক দোলাচলের সুযোগে জেএমএম আদিবাসী আবগকে কাজে লাগিয়ে জমি তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একাংশের আবার ব্যাখ্যা, জেএমএম আদিবাসী ভোট কাটলে তৃণমূলেরই লাভ।
বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর মতে, ‘‘তৃণমূল এখন বিজেপি বিরোধিতার জন্য বিভিন্ন দলকে আহ্বান করছে। আর এখানে জেএমএম-এর কোনও সংগঠন নেই। জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীরা বিজেপিকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি, জেএমএম যে দল যাই দাবি করুক, জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রয়েছেন।’’

Jhargram Hemant Soren
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy