Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
থমকে জঙ্গলমহলের পর্যটন-উন্নয়ন

জরিপ করেও তৈরি হয়নি হোম-স্টে

দার্জিলিঙের আদলে জঙ্গলমহলে হোম-স্টে চালু করার পরিকল্পনা ছিল প্রায় বছর চারেক আগে। সে জন্য জরিপ হয়েছিল জঙ্গলমহল। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বেলপাহাড়ির নাটাচুয়া গ্রামের এই বাড়িগুলিতে হোম স্টে চালুর ভাবনা চলছে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বেলপাহাড়ির নাটাচুয়া গ্রামের এই বাড়িগুলিতে হোম স্টে চালুর ভাবনা চলছে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৩
Share: Save:

দার্জিলিঙের আদলে জঙ্গলমহলে হোম-স্টে চালু করার পরিকল্পনা ছিল প্রায় বছর চারেক আগে। সে জন্য জরিপ হয়েছিল জঙ্গলমহল। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০১৬-র শেষেও কোনও পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি।

প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই জঙ্গলমহলে হোম-ট্যুরিজম শিল্প গড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১২ নাগাদ বেলপাহাড়ির কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে পর্যটকদের রাখার প্রাথমিক কথাবার্তাও চালিয়েছিল বন দফতর। জঙ্গলমহলে এসে প্রতিবারই নিসর্গের প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলে থাকেন পর্যটন সম্ভাবনার কথা। সেখান থেকেই দার্জিলিঙের আদলে ‘হোম-ট্যুরিজম’-এ জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনকে বিকল্প আয়ের সন্ধান দিতে চায় প্রশাসন।

রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পর থেকে প্রতি শীতেই প্রচুর মানুষ জঙ্গলমহলে বেড়াতে আসেন। ভিন্‌ রাজ্য থেকে, এমনকী বিদেশ থেকেও পর্যটকরা ঝাড়গ্রামে ছুটি কাটাতে আসেন। বেলপাহাড়ির পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা গ্রামগুলিতে রাত্রিযাপনের চাহিদাও তুঙ্গে। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসনিকস্তরে অনুমতি না-থাকায় বাসিন্দারা নিজেদের বাড়িতে পর্যটকদের রাখার ঝুঁকি নিতে চান না। তা ছা়ড়া, এ কথাও সত্যি যে, কাঁকড়াঝোর, গাডরাসিনি, লালজল, ঘাঘরা, খাঁদারানির মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকাগুলিতে পর্যটকদের থাকার মতো পরিকাঠামোও নেই।

এক সময় অবশ্য পাহাড় ঘেরা কাঁকড়াঝোর গ্রামে বন বাংলোতে থাকতেন পর্যটকরা। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে দু’টি বাংলোই ধ্বংস করে মাওবাদীরা। এখন বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত জনপদ গুলিতে পর্যটকদের থাকার সুযোগ নেই বললেই চলে। কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দা পরেশ সিংহ ও মঙ্গল মুড়া জানালেন, বছর চারেক আগে হোম-ট্যুরিজম চালু করার আশ্বাস দিয়েছিল বন দফতর। কাঁকড়াঝোরে হোম-স্টে-এর জন্য ছ’টি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই বাড়িগুলিতে প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার কথা বলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কিন্তু কিছুই হয়নি।

বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী সদস্য কংগ্রেসের সুব্রত ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “পুরোটাই প্রচার। হোম-ট্যুরিজম চালু হলে স্থানীয় গরিব মানুষগুলোর বিকল্প স্থায়ী আয়ের পথ খুলে যেত। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও প্রশাসন সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিতে পারল না! এ বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়।”

বেসরকারিস্তরে হোম-ট্যুরিজম চালু করতে চায় বেসরকারি সংস্থাগুলিও। ঝাড়গ্রামের এমনই এক পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “আমরা বেলপাহাড়ির গাডরাসিনি, খাঁদারানি, বালিচুয়া গ্রামে হোম-ট্যুরিজম চালু করতে চাইছি। পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু করব।” প্রশাসন সূত্রের অবশ্য দাবি, এক সময় বেলপাহাড়ি এলাকাটি মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ফলে, এ ধরনের অনুমতি দেওয়ার আগে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগছে।

রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের ডিভিশনাল ম্যানেজার (মেদিনীপুর বিভাগ) অংশুমান মুখোপাধ্যায় বলেন, “পর্যটকদের জন্য বেলপাহাড়িতে হোম-ট্যুরিজম চালু করার জন্য ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে আমরা এলাকা পরিদর্শন করেছি। এরপর প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home stay belpahari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE