Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
চলছে গ্রীষ্মের ছুটি। সৈকত শহরে ঢল। সবেরই দাম নাকি চড়া। ঝোপ বুঝে কোপ মারার নালিশ পর্যটকদের। খোঁজ আনন্দবাজারের
digha

Digha: হোটেলের ঘর ভাড়া না শেয়ার দর!

গ্রীষ্মের ছুটির ভরা মরসুমে দিঘার বিভিন্ন হোটেলের ভাড়া প্রতিদিন যে হারে ওঠা-পড়া করে, তা কার্যত শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনকেও হার মানাচ্ছে।

দিঘায় উপচে পড়া ভিড়।

দিঘায় উপচে পড়া ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না
দিঘা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২২ ০৬:৩২
Share: Save:

ভোর থেকে প্রায় ঘণ্টা চারেক ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হোটেলের দরজায় দরজায় ঘুরছিলেন কলকাতা থেকে আসা এক পর্যটক। কোথাও যদি রুম ভাড়া পাওয়া যায়— সেই আশায়। তাঁর সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দেন প্রায় সব হোটেল কর্তৃপক্ষই। কেউ জানিয়েছেন ঘর খালি নেই। আবার সাধারণ মানের ঘরের জন্য কেউ যা ভাড়া চেয়েছেন, তা শুনে চক্ষুচড়কগাছ পর্যকটের। শেষে প্রায় তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে কোনও রকমে রাত কাটিয়ে তিনি পরের দিন ভোরে ঘরের পথে পা বাড়িয়েছেন।

বাঙালির সপ্তাহান্তের ঘোরার অন্যতম প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘা। আমজনতার পাশাপাশি, জেলার এই সৈকত শহরের পর্যটন নিয়ে উৎসাহী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই সৈকত শহরে ঘুরতে এসে গত কয়েক সপ্তাহে বহু পর্যটকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর যার প্রধান কারণ উঠে আসছে অধিকাংশ হোটেলেই লাগামছাড়া ভাড়া নেওয়ার তথ্য। অভিযোগ, গ্রীষ্মের ছুটির ভরা মরসুমে দিঘার বিভিন্ন হোটেলের ভাড়া প্রতিদিন যে হারে ওঠা-পড়া করে, তা কার্যত শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনকেও হার মানাচ্ছে। অনেক সময় বাড়তি টাকা গুণেও কিছু হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সঠিক পরিষেবা এবং ব্যবহার মিলছে না বলে অভিযোগ। লাগামছাড়া ভাড়ার বিষয়টি প্রশাসনিক নজরদারি চালানোর দাবি করছেন বহু পর্যটক।

গত মে মাসের শেষ সপ্তাহান্তে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে সপরিবারে দিঘায় এসেছিলেন সুব্রত রায়। তাঁর কথায়, ‘‘তিন জন শিশু-সহ আমরা ১০ জনের একটি দল গিয়েছিলাম। মরসুমে হোটেলের ভাড়া বাড়ে বলে জানি। কিন্তু দিঘায় যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কল্পনাতীত। একাধিক হোটেলে নন এসি ঘরের দাম প্রতিদিনের জন্য তিন থেকে চার হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার শুধু শনিবারের জন্য ঘর দিতেই রাজি নন। অনুরোধ করলেও কটূ কথা শুনতে হয়েছে। শেষে নন এসি ঘর দু’হাজার টাকা দিয়ে থাকতে হয়েছে।’’ শুধু ওই পর্যটক নন। ইদের সময় দিঘা গিয়েছিলেন ঘাটালের এক দম্পতি। তাঁদেরও একই অভিজ্ঞতা। ওই দম্পতি বলছেন, ‘‘অন্য সময় যে সব ছোট হোটেলে নন এসি ঘরের ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকা নেওয়া হয়, তা-ই দেড় হাজার টাকা দিয়ে থাকতে হয়েছে।’’ আরেক পর্যটকের কথায়, ‘‘করোনা কালে হোটেল বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছিল, এখন এভাবে গলা কাটা দাম দিয়ে তা হয়তো পুষিয়ে নিচ্ছেন একাংশ হোটেল-লজ মালিক।’’

ওল্ড এবং নিউ দিঘায় বড় এবং মাঝারি মাপের প্রায় ৭০০র কাছাকাছি হোটেল এবং লজ রয়েছে। বড় হোটেলগুলিতে কোন ঘরের ভাড়া কত, তা তাদের ওয়েবসাইটেই দেওয়া দেওয়া থাকে। সাধারণত, মাঝারি মাপের হোটেলগুলিতে বাতানুকুল ঘর এক থেকে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রীষ্মের ছুটি, ইদের মতো সময়ে সেই সব ঘরের ভাড়া কোথাও কোথাও আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্তও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত, ওল্ড দিঘার শিবালয় মন্দির রোড, রাজবাড়ি সংলগ্ন হোটেল এবং লজগুলিতে ‘গলা কেটে’ ঘর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিউ দিঘার ‘এন–টু’ সেক্টরেও ঘর ভাড়া দেওয়া নিয়ে ‘জুলুমবাজি’ চলে বলে দাবি।

এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আবার ছুটির মরসুমেও সব সপ্তাহে একই থাকছে না। গত সপ্তাহান্তেই শিবালয় মন্দির রোডের একাধিক হোটেলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে শীতাতপ ঘর দেড় থেকে দু’হাজার টাকায় মিলছে। আর সাধারণ ঘর মিলছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অথচ ইদের সময় এবং মে মাসের শেষ সপ্তাহ তা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। এখন ভাড়ার এত তফাৎ কেন!

হোটেলের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে এক যুবক বলছেন, ‘‘একটা সময় দাম বড়েছিল। কিন্তু আপনি ২০ জুনের পরে আসুন না। দেখবেন ভাড়া আরও কমে যাবে। আর এখন যা পরিস্থিতি তাতে অনেকেই রুম পাচ্ছে না। আর আপনি ভাড়া নিয়ে দরাদরি করছেন!’’ কোনও কোনও হোটেলে যে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, সেই অভিযোগ মানছে হোটেল মালিকদের সংগঠনও। দিঘার হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শহর থেকে ভিতরের দিকে কিছু কিছু হোটেল অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছি।’’

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দিঘাকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে হোটেল এবং লজের রুম ভাড়া ঠিক কতটা নেওয়া হচ্ছে, তা প্রশাসনিকভাবে খতিয়ে দেখা হয় না বলে অভিযোগ। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পাশাপাশি রামনগর-১ ব্লকে সৈকত শহরের নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোনও অভিযোগ এখন পর্যন্ত তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি বলে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রের খবর। যদিও পর্যটকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘ছুটির মরসুম মিটে যাওয়ার পর ডিএসডিএ এবং হোটেল মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। কোন হোটেলে কত ভাড়া হওয়া উচিত সে ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

digha tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE