কাজ শেষ হয়নি। তবে নম্বর প্লেট ঝুলে গিয়েছে লরির সামনে। পার্থ প্রতিম দাসের তোলা ছবি।
লরি তৈরির আগেই মিলছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর। নম্বর প্লেট লাগিয়েই গ্যারাজে লরি তৈরি চলছে বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও ধরনের গাড়ি কেনার পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য আরটিও অফিসে গাড়িটি নিয়ে যেতে হয়। পরিবহণ দফতরে রেজিস্ট্রেশনের পরই মেলে গাড়ির নম্বর। অথচ নিয়মের তোয়াক্কা না করে গাড়ি তৈরির আগেই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সজল অধিকারী জানাচ্ছেন, কোনও মালবাহী গাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে দফতরের আধিকারিকরা গাড়িটি পরীক্ষা করে দেখেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই গাড়িটি রেজিস্ট্রি করা হয়। দেওয়া হয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর। গাড়ি তৈরির আগে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ সজলবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘বিষয়টি তাঁর জানা নেই। নিয়মভঙ্গের নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর বা অন্য জায়গা থেকে অনেকে লরির ইঞ্জিন-সহ লোহার কাঠামো কিনে আনেন। তমলুক শহরের গঞ্জনারায়ণপুর এলাকায় হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে একাধিক গ্যারাজে সেই কাঠামো থেকে লরির বাকি অংশের কাজ করান গাড়ির মালিক। এর মধ্যে রয়েছে লরির সামনের অংশ তৈরি, লোহার কাঠামোর মধ্যে কাঠের পাটাতন দিয়ে লরিকে মালবহনের উপযোগী করে তোলার মতো কাজ।
নিয়ম অনুযায়ী, লরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য গাড়ির নথিপত্র নিয়ে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে (আরটিও) আবেদন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে জমা দিতে হয় ১২৪০ টাকা। এরপর নির্ধারিত দিনে নতুন গাড়ি নিয়ে দফতরের কার্যালয়ে যেতে হয়। সেখানে মোটর ভেহিকেলস্ ইনস্পেক্টর গাড়ি পরীক্ষা করে দেখেন। গাড়ির সবকিছু ঠিক থাকলে সাতদিনের মধ্যে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা হয়। দেওয়া হয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর। তারপরেই পথে নামে গাড়ি।
যদিও এই নিয়ম রয়েছে খাতায়-কলমে। তমলুকের একাধিক গ্যারাজে নম্বর প্লেট লাগিয়েই কাঠামো থেকে লরি তৈরির কাজ চলছে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্যারাজ মালিক স্বীকারও করছেন, ‘‘কাঠামো থেকে লরি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পরিবহণ দফতরের রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলছে। এ জন্য পরিবহণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার লোকও রয়েছে।’’
পরিবহণ দফতরের একাংশ কর্মীর যোগসাজশেই গাড়ি পরীক্ষা না করে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তমলুকের এক গাড়ির মালিকের দাবি, নিয়ম মেনে লরির রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে নথিতে ত্রুটির অজুহাতে দফতরের কিছু কর্মী হয়রান করেন। এতে একদিকে যেমন সময়ও নষ্ট হয়, তেমনই লরি পথে নামাতে দেরি হওয়ায় ক্ষতির বহর বাড়ে। পরিবর্তে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ করলেই মুহুরিদের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের কাজ হয়ে যায়। কোনও ঝক্কি নেই।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ পর্ষদের সদস্য তথা ময়নার তৃণমূল বিধায়ক সংগ্রাম দোলইয়ের দাবি, ‘‘দফতরের কিছু কর্মী টাকা নিয়ে কাজ করে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। তবে গাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
টাকা নেওয়ার কথা মানছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুহুরিও। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য গাড়ি মালিকদের সাহায্যের বিনিময়ে কিছু টাকা নিয়ে থাকি।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‘কোনও গাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কথা নয়। এ ধরনের কাজে আমাদের কেউ জড়িত আছেন বলেও জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy