Advertisement
০৮ মে ২০২৪
বেলিয়াবেড়া

শিশুকন্যাকে খুনের দায়ে যুগলের কারাদণ্ড

নিজের দু’বছরের মেয়েকে নৃশংসভাবে খুনের দায়ে এক মহিলা ও তাঁর প্রেমিককে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল ঝাড়গ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। বুধবার বিচারক বিভাসরঞ্জন দে এই সাজা ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত বছর পঁচিশের লছমি মুণ্ডার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুণ্ডিতে।

বুধবার ঝাড়গ্রাম আদালতে লছমি ও রফিকুল।—নিজস্ব চিত্র।

বুধবার ঝাড়গ্রাম আদালতে লছমি ও রফিকুল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০০:৩৩
Share: Save:

নিজের দু’বছরের মেয়েকে নৃশংসভাবে খুনের দায়ে এক মহিলা ও তাঁর প্রেমিককে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল ঝাড়গ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। বুধবার বিচারক বিভাসরঞ্জন দে এই সাজা ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত বছর পঁচিশের লছমি মুণ্ডার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুণ্ডিতে। তাঁর প্রেমিক রফিকুল শেখের বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানার নতুনদিহা গ্রামে। সরকারি কৌঁসুলি প্রশান্ত রায় জানান, দুই সাজাপ্রাপ্তকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানাও ধার্য করেছেন বিচারক। জরিমানার টাকা অনাদায়ে দু’জনকেই আরও দু’বছর সশ্রম কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

সরকারি কৌঁসুলি প্রশান্ত রায় জানান, ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি গ্রামের লাগোয়া সুবর্ণরেখা নদীর চরে লছমির দু’বছরের মেয়ে শর্মিলিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। শর্মিলিকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে ওই দিনই গ্রেফতার হন লছমি ও রফিকুল। পুলিশি জেরায় লছমি স্বীকার করেন অবৈধ প্রণয়ের জেরে প্রেমিকের সাহায্য নিয়ে নিজের দু’বছরের মেয়েকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। মারের চোটে গুরুতর জখম শর্মিলি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে নদীর চরে কোমর অবধি বালিচাপা দিয়ে চারপাশে বিস্কুট ছড়িয়ে দেন মা। উদ্দেশ্য ছিল, বিস্কুটের টানে সেখানে এসে মেয়েকে ছিঁড়ে খাবে কুকুরের দল। শর্মিলিকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ওই হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। এরপর আদালতের অনুমতিক্রমে মামলায় খুনের ধারা যুক্ত করে পুলিশ।

আদালত সূত্রের খবর, বছর সাতেক আগে ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুণ্ডির বাসিন্দা লছমির বিয়ে হয়েছিল ওড়িশার বড়বিল শহরে এক দিনমজুরের সঙ্গে। পেশায় রাজমিস্ত্রি বছর পঁচিশের রফিকুল শেখ কাজের সূত্রে বড়বিলে থাকতেন। কাজের সূত্রে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ সলের গোড়ায় স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন লছমি। কিন্তু দু’বছরের ছোট মেয়ে শর্মিলিকে ফেলে আসতে পারেন নি তিনি। শর্মিলিকে নিয়েই রফিকুলের সঙ্গে লছমি চলে আসেন এ রাজ্যে। কিন্তু, শর্মিলিকে মেনে নিতে পারে নি রফিকুল। শর্মিলিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন লছমি।

এই ঘটনায় কঠোর শাস্তি হল না কেন? আইনজীবী মহলের একাংশের বক্তব্য, লছমি ও রফিকুলই যে খুনের উদ্দেশে শিশুটিকে শারীরিক অত্যাচার করে বালিচাপা দেন, সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী কেউ ছিলেন না। সেই কারণে দুই অভিযুক্তকে ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE