Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ছবিতে ইতিহাস কই, প্রশ্ন উঠছে প্রত্নতত্ত্বের প্রদর্

জেলার গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্র ও প্রত্নসৌধগুলি সম্পর্কে পড়ুয়া ও সর্বসাধারণকে সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই প্রদর্শনী দেখতে এসে হোঁচট খাচ্ছেন দর্শকরাই।

প্রদর্শনী দেখছে পড়ুয়ারা। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

প্রদর্শনী দেখছে পড়ুয়ারা। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

জেলার গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্র ও প্রত্নসৌধগুলি সম্পর্কে পড়ুয়া ও সর্বসাধারণকে সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই প্রদর্শনী দেখতে এসে হোঁচট খাচ্ছেন দর্শকরাই।

বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের সভাঘরে শুরু হয়েছে ‘প্রত্নতত্ত্বের আলোকে পশ্চিম মেদিনীপুর’ শীর্ষক পাঁচদিনের এক চিত্র প্রদর্শনী। শুক্রবার বিকেলে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো। আর সেখানে নজরে এল এমন ছবিই।

প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবিতে সেই প্রত্নস্থান, প্রত্নসম্পদ অথবা প্রত্নসৌধের কেবল নাম লেখা রয়েছে। কিন্তু ছবির তলায় বিস্তারিত তথ্য না থাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও প্রত্নসৌধগুলি সম্পর্কে দর্শকদের সংশ্লিষ্ট ইতিহাস জানার সুযোগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ দর্শকদের। গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান তথা লোকসংস্কৃতি গবেষক লক্ষীন্দর পালোই বলেন, “প্রতিটি ছবির তলায় অন্তত তিন-চার লাইনে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও সন-তরিখ দেওয়া জরুরি ছিল।’’

কুমুদকুমারী স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জয়জিত ঘোষ, ঋক মণ্ডলদের কথায়, “ছবিগুলিতে কেবল শিরোনাম লেখা রয়েছে। কিন্তু সেগুলি কোথায় আছে, কবে হয়েছিল, কী তার ইতিহাস কিছুই তো লেখা নেই।” জেলার বর্ষীয়ান লোকসংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রদর্শনীটি অসাধারণ। তবে পরিকল্পনায় কিছু ত্রুটি রয়েছে। পরীক্ষার মাসে কতজন পড়ুয়া প্রদর্শনী দেখতে আসবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”

এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণির মাহাতো, মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো, ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেবের উপস্থিতিতেই জেলার প্রবীণ লোকসংস্কৃতি গবেষক মধুপ দে-র আক্ষেপ, ১৯৭৮ সালে এই জঙ্গলমহলে লালগড়ের সিজুয়া এলাকায় তারাফেনি নদীর অববাহিকায় ভারতের মধ্যে প্রাচীন মানব জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল। অথচ জঙ্গলমহলের প্রত্নসম্পদগুলির অনুসন্ধান ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারিস্তরে কোনও হেলদোল নেই। সাঁকরাইলের পাথরকাটি ও লালগড়ের ডাইনটিকরিতে বৌদ্ধবিহারের বহু দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন মাটির তলায় চাপা। মধুপবাবু বলেন, “এখানেও অনুসন্ধান চালানো হলে মোগলমারির মতো বৌদ্ধবিহারের নতুন ইতিহাসের সন্ধান পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

মন্ত্রী চূড়ামণিবাবু অবশ্য দায় চাপিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের উপর। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১১০টি প্রত্নসৌধ ও প্রত্নক্ষেত্র দেখভালের কাজ করা হচ্ছে। প্রত্নসম্পদ রক্ষার দায়িত্ব ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে নিতে হবে।”

তবে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার-এর প্রত্নরসায়নবিদ দিলীপ দত্তগুপ্তের জবাব, “ছবির তলায় তথ্য সম্বলিত ক্যাপসন থাকলে ছবির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। আমরা চাই, ছবি দেখে দর্শকরা তথ্য-অনুসন্ধানে আগ্রহী হোক। সেখানেই আমাদের উদ্যোগের সার্থকতা।” প্রদর্শনীতে রয়েছে প্রায় তিনশোটিরও বেশি ছবি। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী সোমবার ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Incomplete Exhibition Archaeology
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE