Advertisement
E-Paper

নন্দীগ্রামে কি বইতে শুরু করেছে ‘গেরুয়া হাওয়া’

রাজ্যে ‘পরিবর্তনের’ সূচনা হয়েছিল যেখান থেকে, বহু আন্দোলনের সাক্ষী পূর্ব মেদিনীপুরের সেই নন্দীগ্রামে কি বইতে শুরু করেছে ‘গেরুয়া–হাওয়া’? শনিবার কলকাতায় মেয়ো রোডে বিজেপি যুব মোর্চার সভায় যে ভিড়় হয়েছিল তার অনেকটাই জুড়ে ছিল পূর্ব মেদিনীপুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩২
সরব: দলের যুব সমাবেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শনিবার মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সরব: দলের যুব সমাবেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শনিবার মেয়ো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

উলট পুরাণ কি তবে শুরু! ঘাসফুলের ‘গড়’ কি আলগা হতে চলেছে!

রাজ্যে ‘পরিবর্তনের’ সূচনা হয়েছিল যেখান থেকে, বহু আন্দোলনের সাক্ষী পূর্ব মেদিনীপুরের সেই নন্দীগ্রামে কি বইতে শুরু করেছে ‘গেরুয়া–হাওয়া’? শনিবার কলকাতায় মেয়ো রোডে বিজেপি যুব মোর্চার সভায় যে ভিড়় হয়েছিল তার অনেকটাই জুড়ে ছিল পূর্ব মেদিনীপুর। অনন্ত এমনটাই দাবি বিজেপির জেলা নেতৃত্বের। জেলা নেতৃত্বের এই দাবি যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ কেবল নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকা থেকেই ১১টি বাস গিয়েছিল কলকাতায় অমিত শাহর ওই সভায়। পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে বিজেপি তৃণমূলকে বেগ দিলেও এখানে সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেোনি। তার পরেও সভা ঘিরে নন্দীগ্রাম থেকে এমন সাড়াকে ‘সাফল্য’ বলেই দাবি করছে বিজেপি।

কেবল নন্দীগ্রাম নয়, তমলুকের ময়না থেকেও সত্তরটি, ভগবানপুর, পটাশপুর, চন্ডীপুর, নন্দকুমার থেকে বাসে চেপে প্রচুর সমর্থক কলকাতা গিয়েছিল বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। এ ব্যাপারে বিজেপির তমলুক জেলা সাংগঠনিক সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস জানান, দুটি মহকুমা থেকে তিনশ বাস দেওয়া হয়েছিল। প্রায় তেইশ হাজার কর্মী গিয়েছিলেন।

খোদ পরিবহণ মন্ত্রীর জেলা এবং ‘পরিবর্তনের আঁতুড় ঘর’ নন্দীগ্রাম থেকে যে ভাবে বিজেপির যুব মোর্চার সভায় লোকজন অংশ নিয়েছে তাতে রাজনৈতিকমহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। ২০০৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। তারপর থেকে নন্দীগ্রামে বাম-কংগ্রেস হালে পানি পায়নি। পরবর্তীতে বার বার উঠে এসেছে নন্দীগ্রাম-সহ গোটা জেলায় শাসক দলের হাতে বিরোধীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ। বিরোধী রাজনীতি করলে জমি দখল থেকে জরিমানা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, নন্দীগ্রাম আর খেজুরিতে বিরোধী কণ্ঠস্বর বারবারই শাসক দলের কোপে পড়েছে। অথচ, সেখান থেকে বিজেপির সভায় এত লোক যোগ দিতে এলেন কী ভাবে?

নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালের অবশ্য দাবি, ‘‘এখান থেকে ফাঁকা ফাঁকা বাস গিয়েছে। কোনও লোক তেমন ছিল না।’’ এদিকে, দলীয় কর্মসূচি থেকে ফিরে আসা এক বিজেপি কর্মী তথা ভেকুটিয়ার বাসিন্দা রবীন ভুঁইয়া বলেন, ‘‘অতীতে সিপিএম এবং তারপর তৃণমূল নানা ভাবে অত্যাচার করেছে। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মানুষ এ বার প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে।’’ তবে কি শাসক দলের রোষে পড়া সাধারণ মানুষ এ বার ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ চাইছেন? না হলে আগে বিরোধীদের সভা উপলক্ষে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে বাস দিতে আপত্তি জানাতেন বাস মালিকেরা। কারণ, শাসক দলের কোপে পড়ার ভয়। সেই জায়গায় এবার বিজেপির সভায় কোনও সাহসে ভর করে বাস দিলেন বাসমালিকেরা স্বভাবতই সেই প্রশ্ন উঠেছে।

শনিবারের সভায় কলকাতায় কত লোক গিয়েছিল, সে ব্যাপারে গোয়েন্দারা রিপোর্ট জমা দিয়েছেন জেলা পুলিশের কাছে। তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলার পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসা কুমার।

পূর্ব মেদিনীপুর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার বেরা জানান, বিক্ষিপ্তভাবে আয়োজকরা স্থানীয় রুটগুলি থেকে বাস নিয়েছিলেন। তবে অধিকাংশ বাসই বাইরে থেকে আনা হয়েছিল।

বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষ ভয়কে সরিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। প্রথমে প্রতিবাদ, এখন প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। এরপর বাধা দিলে তারা প্রতিশোধ নিতে পিছপা হবে না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘নির্বাচনে জনমত দেওয়ার সুযোগ পেলে, সাধারণ মানুষই বুঝিয়ে দেবে তারা কী চায়। ওখানে আমাদেরও হাজার হাজার সমর্থক রয়েছে। তবে, শনিবার বিজেপি সভায় প্রচুর লোক হয়েছে বলে শুনেছি।’’

পূর্ব মেদিনীপুর থেকে বিজেপি সভায় এত লোক সমাগম নিয়ে যখন বিরোধীরা ‘অক্সিজেন’ খুঁজছে, তখন তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন শাসক দলের সাংসদ। কাঁথির সাংসদ ও জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘সবই সিপিএমের লোকেরা গিয়েছিল। আমরা রিপোর্ট খতিয়ে দেখছি।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলের জনসমর্থন ক্রমশ বাড়ছে। তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’

তবে কলকাতায় অমিত শাহর সভায় যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁদের উপরে হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

Amit Shah BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy