Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Internal clash

তৃণমূলের ঘরের কোন্দল রাস্তায়!

 শহরে কাকে পুরপ্রধান করেছেন, এই প্রশ্ন তাঁরা দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও করেছেন, প্রকাশ্য সভায় এ দাবি করেছেন বিশ্বনাথ।

বিশ্বনাথের নেতৃত্বে মিছিল।

বিশ্বনাথের নেতৃত্বে মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:২০
Share: Save:

মেদিনীপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান সৌমেন খান ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করেছেন বলে দাবি। পুরপ্রধানকে ধিক্কার জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব ও তাঁর অনুগামীরা। সৌমেন বিধায়ক জুন মালিয়ার অনুগামী হিসেবে পরিচিত। বিশ্বনাথ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার অনুগামী হিসেবে পরিচিত। দুই শিবিরের রেষারেষি নতুন নয়, বেশ কয়েক মাসের। সেটাই ফের নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

শহরে কাকে পুরপ্রধান করেছেন, এই প্রশ্ন তাঁরা দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও করেছেন, প্রকাশ্য সভায় এ দাবি করেছেন বিশ্বনাথ। ধিক্কার সভায় তৃণমূলের শহর সভাপতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বৈষম্য তৈরি করার চেষ্টা করছেন (পুরপ্রধান)। দলের মধ্যে বিভাজন করার চেষ্টা করছেন। তৃণমূল কখনও বরদাস্ত করবে না। আমরা সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। ওই ভিডিয়ো প্রকাশ করে। বলেছি, কাকে আপনারা চেয়ারম্যান করেছেন? যে দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেসটাকে তুলে দিয়েছে। এ বার তো তৃণমূলটাকে তোলার চেষ্টা করছে!’’ সৌমেন এক সময়ে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। গত বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে এসেছিলেন। পুরপ্রধান মিথ্যাচার, অপপ্রচারের করেছেন, এই দাবি করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ওই ধিক্কার সভা হয়েছে। তার আগে এলাকায় ধিক্কার মিছিলও হয়েছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের ডাকেই। সৌমেনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সুর চড়াচ্ছেন বিশ্বনাথরা, এটা পথচলতি অনেককে বিস্মিতও করেছে।

এ দফার রেষারেষির সূত্রপাত গত রবিবার। ওই দিন ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েক। অর্পিতা নির্দল কাউন্সিলর। তিনি এলাকার প্রাক্তন নির্দল কাউন্সিলর বিশ্বেশ্বর নায়েকের স্ত্রী। তৃণমূলের সঙ্ঘমিত্রা পালকে হারিয়ে গত পুরভোটে জয়ী হন অর্পিতা। অনুষ্ঠানে ছিলেন পুরপ্রধান। তাঁর বক্তৃতার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়ায় (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি)। ভিডিয়োয় শোনা যাচ্ছে, পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘বিভিন্নভাবে এই অর্পিতা নায়েককে হারাবার জন্য পুলিশ থেকে আরম্ভ করে অনেকে অনেক রকম চক্রান্ত করেছে। শুধুমাত্র আপনারা (এলাকাবাসী) তাঁর পাশে থেকে তাঁকে রক্ষা করেছিলেন বলেই অর্পিতা নায়েক আজকে পুরসভায় কাউন্সিলর হয়েছেন আপনাদের সেবা করবার জন্য।’’ একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, গত পুরভোটের আগে তৃণমূলের তরফে ওয়েবসাইটে একটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই তালিকায় নাম ছিল অর্পিতার। পরে আরেকটি তালিকায় বেরোয়। সেটিই ছিল চূড়ান্ত তালিকা। সেই তালিকায় এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নাম ছিল সঙ্ঘমিত্রার। তৃণমূল পুরপ্রধান কেন নির্দল কাউন্সিলরের প্রশংসা করবেন, প্রশ্ন বিশ্বনাথের অনুগামীদের। ওই অনুষ্ঠানে সৌমেনের অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল কাউন্সিলরদেরও উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। পুরপ্রধানের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় আমি গত বিধানসভা ভোটের কথা বলেছি! পুরভোটের কথা বলিনি। আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে ভিডিয়োয়!’’ অর্পিতার দাবি, পুরপ্রধান কী বলেছেন, তিনি শোনেননি!

ধিক্কার সভা থেকে মহিলা তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর মৌ রায়ের ‘পাল্টা’ আশ্বাস, ‘‘পুরসভা কেন্দ্রিক কোনও সমস্যা থাকলে সঙ্ঘমিত্রাকে বলবেন (এলাকার)। আপনাদের সমস্যা সমাধানে আমরা এগিয়ে আসব।’’ পুরপ্রধানকে বিঁধে জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলছেন, ‘‘চেয়ারম্যান আমাদের দলে একেবারে নতুন এবং আনকোরা! তাই তৃণমূলের নীতি- আদর্শের সঙ্গে তিনি এখনও একাত্ম হয়ে উঠতে পারছেন না! মানসিকভাবে সুস্থ লোক এমন কথা বলতে পারেন না!’’ নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোয় অর্পিতাকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। কেন পুরপ্রধান তাঁর প্রশংসা করেছেন, এই প্রশ্নেই তৃণমূলের ঘরে ‘বিদ্রোহ’ বেধেছে। কোন্দল নেমে এসেছে একেবারে রাস্তায়। আপনার বিরুদ্ধে তো দলের ধিক্কার মিছিলও হয়ে গেল? সদুত্তর এড়িয়ে পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘আমি কোথাও দলবিরোধী কোনও মন্তব্য করিনি!’’ সমাজমাধ্যমে বিশ্বনাথের ছেলে, শহর যুব তৃণমূলের নেতা প্রসেনজিৎ পাণ্ডবের পোস্ট, ‘‘শুনেছিলাম পুরবোর্ড তৃণমূলের, আর তার চেয়ারম্যান তৃণমূলের। তবে ঠিক শুনেছি বা ঠিক জানি কি না, জানি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Internal clash TMC midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE