একসময় যে আম গাছের তলা ছিল আতঙ্কের, এখন সেখানেই ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন গ্রামবাসীরা। সেই আম গাছের তলায় বসে শিশুরা যে অলচিকি শেখে! শেখান গ্রামের শিক্ষিত এক আদিবাসী দম্পতি।
গ্রামের নাম বাঁকিশোল। গোয়ালতোড় (গড়বেতা ২) ব্লকের পিংবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে এই আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। মোট ৬০-৬২ টি আদিবাসী পরিবারের বাস। জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামের অদূরেই রামগড়, কয়েক কিলোমিটার দূরে লালগড়। অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম জেলা। আশেপাশের গ্রাম মেটালা, ভালুকবাসা, মহুলতলা, আঁধারিয়া, শিরিষবনি, পোড়াকানালি প্রভৃতি। বাম আমলের শেষের দিকে লালগড় আন্দোলন পর্বে এই এলাকা গুলি ছিল মাওবাদীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। এলাকায় গড়ে উঠেছিল ছত্রধর মাহাতোদের জনসাধারণের কমিটি। সেই সময়ের কথা যেন এখনও টাটকা এলাকাবাসীর কাছে। কিসানজির মৃত্যু কিংবা ছত্রধর মাহাতোর ফিরে আসার খবর শুনেছেন অনেকেই। যদিও তা নিয়ে আর কথা বাড়াতে চান না তাঁরা।
অশান্ত সময়ের দেড় দশক পার। সরকারি প্রকল্পের ছোঁয়ায় বদলেছে গোয়ালতোড় ব্লকের লালগড় সীমানা ঘেঁষা জনপদ গুলির জীবনযাত্রা। বাঁকিশোল গ্রামে ঢুকেছে ঢালাই রাস্তা, এসেছে বিদ্যুৎ, পাইপ লাইনে জল। আবাস যোজনায় সরকারি বাড়ির আশায় আছেন অনেকেই। জঙ্গল ভেদ করে গ্রামে ঢোকার মুখেই প্রকাণ্ড এক আম গাছ। পাশেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। প্রতি রবিবার সকাল থেকে দুপুর— সেই গাছের তলা মুখরিত থাকে কচিকাঁচাদের কলরবে। এই গাছ তলাতেই বসে পাঠশালা। শিশুদের অলচিকি শেখানোর পাঠশালা। শেখান গ্রামের এক আদিবাসী দম্পতি। উজ্জ্বল সরেন ও অনুপমা মান্ডি। বছর তিরিশের উজ্জ্বল সাঁওতালি ভাষায় স্নাতক, তাঁর স্ত্রী অনুপমা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাঁওতালি ভাষায় এম এ পাশ করেছেন। চাকরির চেষ্টার ফাঁকেই চলে তাঁদের শিশু শিক্ষা। শিশুদের অলচিকি হরফ চেনান, লেখান। সে জন্য অলচিকি বইও কিনে এনেছেন তাঁরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)