Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেদিনীপুর থেকে ফের লন্ডনে পান রফতানির উদ্যোগ

প্রথমবার পরীক্ষায় সাফল্য মেলেনি। ব্যর্থতার সেই লজ্জা ভুলে ইউরোপের বাজারে আদৌ কি পাড়ি দিতে পারবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পান? আপাতত এই প্রশ্ন নিয়ে উদ্যানপালন দফতরের দরজায় ঘুরছেন জেলার পানচাষিরা।

পরিদর্শন: পান বরজ ঘুরে দেখছেন জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

পরিদর্শন: পান বরজ ঘুরে দেখছেন জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২১
Share: Save:

প্রথমবার পরীক্ষায় সাফল্য মেলেনি। ব্যর্থতার সেই লজ্জা ভুলে ইউরোপের বাজারে আদৌ কি পাড়ি দিতে পারবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পান? আপাতত এই প্রশ্ন নিয়ে উদ্যানপালন দফতরের দরজায় ঘুরছেন জেলার পানচাষিরা।

গত বছর ডিসেম্বরে প্রথমবার পরীক্ষামূলক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের পাঁচশো কেজি পান লন্ডনে রফতানি করা হয়েছিল। কিন্তু বিদেশের বাজারে ঢোকার আগে গুণমান পরীক্ষায় (কোয়ালিটি কন্ট্রোল টেস্ট) সমস্ত পানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ধরা পড়ে। পান নিতে অস্বীকার করেন বিদেশের পাইকাররা। এ বার ফের জেলার পান ইউরোপে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। তার আগে পানচাষিদের সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, মূলত বরজে অপরিশোধিত জল ব্যবহারের ফলে পানে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। সেই পানই খোলা বাজারে বিক্রি হয়। পানের গুণমান নিয়ে ছোট পানচাষিরা তেমন মাথা ঘামান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কাঁচা পান পাকিয়ে হলুদ করে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতো বিভিন্ন রাজ্যের বাজারে পাঠানো হয়।

বিদেশে পানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পান নিয়মিত বিদেশে গেলেও মাঝেমধ্যেই অবশ্য গুণমান পরীক্ষায় ফেল করে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পান এখনও বিদেশের উড়ান ধরতে পারেনি। বছর তিনেক আগে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় গঠিত হয় ‘দাঁতন অ্যাগ্রো প্রোডিউসার কোম্পানি’। এই সংস্থার অধীনে রয়েছে ৩২০টি পান চাষি পরিবার। সংস্থার সভাপতি হিমাঙ্ক পাল জানালেন, পান বরজে নিয়মিত জল সিঞ্চন করতে হয়। অধিকাংশ চাষি পুকুরের জল ব্যবহার করছেন। এর ফলে পানে সংক্রমণ হচ্ছে। বিদেশের বাজারে পান বেচে লাভের মুখ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার পান চাষিরা।

পক্ষান্তরে, জেলার পানচাষিদের অভিযোগ, ইউরোপে পান রফতানির জন্য উদ্যানপালন দফতরের অধীনে পানচাষিদের নাম নথিভুক্ত করার কাজ এখনও শুরুই হয়নি। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য চাষিদের হাতেকলমে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হচ্ছে না। দফতরে গিয়ে তাঁদের ফিরে আসতে হচ্ছে। উদ্যান পালন দফতরের দাবি, জেলা পরিষদের উদ্যোগে বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দলকে দিয়ে পান বরজগুলি পরিদর্শন করানো হয়েছে। একাধিক ল্যাবরেটরিতে গুণমান পরীক্ষায় পানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়েছে।

জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “পান বরজে সমান ভাবে পরিস্রুত জলের সেচ দেওয়ার জন্য নতুন ভাবে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। নতুন আর্থিক বছরে আমরা পানচাষিদের জন্য একটি কমন ফেসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) তৈরির চেষ্টা করছি। ওই কেন্দ্রে পরিস্রুত জলে পান ধোয়ার সুযোগ পাবেন চাষিরা।

গুণমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে জেলার পানচাষিদের মুখে হাসি ফুটবে। আপাতত সেই অপেক্ষা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Betel Leaf Export London
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE