Advertisement
E-Paper

পুরনো মাওবাদী ঘাঁটিতে চমক ‘ডুবন্ত দুর্গা’

গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হত। সেই সুড়ঙ্গে মাওবাদী স্কোয়াডের লোকজন লুকিয়ে থাকত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্রেফ অভিনব দুর্গাপুজোর আয়োজন করে বিরিহাঁড়ি গ্রামের নাম প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছেন বাসিন্দারা। 

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৬
চলছে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

চলছে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

এক সময় মাটি খুঁড়লেই মিলত মাইন আর অস্ত্রশস্ত্র। আতঙ্কের দিনরাত কাটাতেন বাসিন্দারা। অশান্তি-অসুরকে দূরে ঠেকাতে ২০১৬ সাল থেকে মাটি খুঁড়ে সর্বজনীন দুর্গা পুজোর আয়োজন করছেন ঝাড়গ্রামের বিরিহাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। জেলা ছাড়িয়ে এখন বাইরের লোকজনের কাছেও পরিচিত হয়ে উঠেছে জঙ্গলমহলের এই দুর্গাপুজো। এ বার তৃতীয় বর্ষে উদ্যোক্তাদের চমক ‘ডুবন্ত দুর্গা’।

বিরিহাঁড়ি গ্রামের তরুণ সঙ্ঘের মাঠে ছ’ফুট গভীরতা বিশিষ্ট একশো বর্গফুটের পুকুর কাটা হয়েছে। একেবারে প্রাচীন দিঘির মতো করে গড়ে তোলা হবে ওই জলাশয়। উদ্যোক্তাদের দাবি, এই পুজো দেখতে এসে দর্শকদের জন্য রয়েছে পরতে পরতে চমক! পুকুরের নীচে তৈরি হয়েছে ১২ ফুট গভীর ও ৬০ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গপথ। সেই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে দর্শকরা পৌঁছবেন জলাশয়ের বাইরে কলসি আকৃতির মূল মণ্ডপে। সেখানে কাচ দিয়ে ঘেরা ৪৮ বর্গফুটের খানিকটা অ্যাকোরিয়ামের মতো আরেকটি বদ্ধ জলাধার তৈরি করা হচ্ছে। ওই জলাধারের ভিতর থাকবে থার্মোকল দিয়ে তৈরি দুর্গার একটি বিগ্রহের আদল। যা দেখে মনে হবে বহু প্রাচীন ওই বিগ্রহটি জলের তলায় রয়েছে। মণ্ডপে জলাধারটির বাইরে পুজোর জন্য থাকবে একটি দুর্গা মূর্তি। মণ্ডপের ভিতরে ৫৮ টি মডেলের মাধ্যমে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের বিভিন্ন পৌরাণিক ঘটনার বিবরণ থাকছে। তবে উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রথমে দর্শকরা সুড়ঙ্গপথ দিয়ে মূর্তি দর্শন করতে যাওয়ার সময় বুঝতেই পারবেন না যে, তাঁরা জলের তলা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিমা দর্শন করে বেরিয়ে আসার পরে বিষয়টা বোঝা যাবে।

২০০৯-১০ সালে এই বিরিহাঁড়ি গ্রামকে ঘাঁটি বানিয়েছিল মাওবাদীরা। মাওবাদী নেতারা আত্মগোপনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরের বিরিহাঁড়ি গ্রামকে। এলাকায় পুলিশ ঢুকলে এগিয়ে দেওয়া হতো মহিলাদের। গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হত। সেই সুড়ঙ্গে মাওবাদী স্কোয়াডের লোকজন লুকিয়ে থাকত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্রেফ অভিনব দুর্গাপুজোর আয়োজন করে বিরিহাঁড়ি গ্রামের নাম প্রচারের আলোয় নিয়ে এসেছেন বাসিন্দারা।

সর্বজনীন এই পুজোর উদ্যোক্তা বিরিহাঁড়ি উদীয়মান তরুণ সঙ্ঘের সম্পাদক জগদীশ মাহাতো জানালেন, ২০১৬ সালে পাতাল দুর্গা এবং গত বছর অদৃশ্য দুর্গা দেখতে দুরদূরান্ত থেকে কয়েক হাজার দর্শক এসেছিলেন। গত বছর বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও পুজো দেখতে এসেছিলেন। এবারও তৃতীয় বর্ষের পুজোয় অদৃশ্য দুর্গা থিম পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে সেই মাটি খুঁড়েই। এ বার পুজোর বাজেট সাত লক্ষ টাকা। যার বেশিরভাগটাই উঠছে পুজোর ক’দিন এলাকায় মেলা বসিয়ে। এ বারই প্রথম মেলা বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তা ক্লাবটির নিজস্ব কাজুবাগান ও পুকুর লিজে দেওয়া আছে। সেখান থেকেও পুজোর খরচ কিছুটা ওঠে।

Durga Tunnel Maoist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy