Advertisement
০২ মে ২০২৪

তিন বার জেল পালিয়ে ধরা পড়ে কর্ণ বলল, ফের জেল পালাব

ঝোপের মধ্যে বাঁশের মাচা। তাতে শুকনো কাঠ বিছিয়ে ঘুমোচ্ছিল বছর বত্রিশের রোগা-পাতলা যুবক। রাত তিনটে। আচমকা ঘুম ভাঙল তার। মাথার কাছে রাখা ভোজালি হাতে তুলে নিয়েও লাভ হল না।

জালে: গ্রেফতারের পরে কর্ণ বেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

জালে: গ্রেফতারের পরে কর্ণ বেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

ঝোপের মধ্যে বাঁশের মাচা। তাতে শুকনো কাঠ বিছিয়ে ঘুমোচ্ছিল বছর বত্রিশের রোগা-পাতলা যুবক।

রাত তিনটে। আচমকা ঘুম ভাঙল তার। মাথার কাছে রাখা ভোজালি হাতে তুলে নিয়েও লাভ হল না।

ততক্ষণে গোটা চত্বর ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। পুলিশ আধিকারিক যখন তাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলেন, তখনও তার চোখে ঘুমের রেশ। সে— জেল পালানো বন্দি কর্ণ বেরা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে, এ বারের মতো খেলা সাঙ্গ।

গত ১ মে রাতে কাঁথি উপ-সংশোধনাগার থেকে সহবন্দি শেখ নাজিরকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়েছিল কর্ণ। মহিষাদল থানার কনস্টেবল খুন এবং ১০ টি ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত কর্ণের সেটা ছিল পালানোর ‘হ্যাট্রিক’। তারপর থেকে তাকে আতিপাতি করে খুঁজেছে কাঁথি থানার পুলিশ। শেষে শুক্রবার রাতে কাঁথির মাজিলাপুরে বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে ওই ঝোপ থেকে পাকড়াও করা হয় কর্ণকে।

পুলিশ জানায়, এ ক’দিনে দিঘা-মন্দারমণি-হাওড়া-পুরী নানা জায়গায় গা ঢাকা দিয়েছিল কর্ণ। পুরীর মন্দিরে পুজোও দিয়েছিল। চেহারা বদলাতে কামিয়েছিল মাথা। তারপর শুক্রবার রাতে সে পৌঁছয় মাজিলাপুরে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘কর্ণের বাড়ির উপর নজর ছিলই। মাজিলাপুরে ফিরতেই ওকে ধরা হয়েছে। নাজিরের খোঁজও চলছে।’’

পুলিশের জালে ধরা পড়ার মতো কর্ণের জেল পালানোর গল্পও সিনেমার মতোই। এ দিন কাঁথি জেলে কর্ণকে নিয়ে গিয়ে পালানোর ঘটনার পুনঃনির্মাণ করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় কর্ণ জানিয়েছে, ছোট করাত দিয়ে লোহার গরাদ কেটেছিল সে। এক সহবন্দির সাহায্যে বাইরে থেকে আসা মুড়ির প্যাকেটের ভিতরে নাকি ওই করাত জেলে আনিয়েছিল সে। আর পালানোর রাতে বন্দিদের খাবারে মিশিয়ে দিয়েছিল ঘুমের ওষুধ। যাতে, গরাদ কাটার শব্দ কারও কানে না আসে। কর্ণের দাবি, ঘুমের বড়িও মুড়ির প্যাকেটে আনিয়েছিল। সেল থেকে বেরিয়ে গামছা আর বিছানার চাদর জুড়ে ‘দড়ি’ বানিয়ে সে আর নাজির পাঁচিল টপকায়।

কর্ণের দাবি সত্যি হলে তো কাঁথি জেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়? জেল সুপার কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘ইতিমধ্যে দুই জেলকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওই রাতে যিনি জেলের কন্ট্রোলার ছিলেন, তাঁকেও শো-কজ করা হয়েছে। আরও কেউ জড়িত বলে জানা গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কর্ণ অবশ্য ধরা পড়েও তেমন বিমর্ষ নয়। এ দিন কাঁথি আদালতে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমকে সে বলে, ‘‘ফের জেল থেকে পালাব।’’ বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ঝুঁকি না নিয়ে কর্ণকে এ বার পাঠানো হয়েছে মেদিনীপুর জেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Karna Bera arrested jailbreak jail Most Wanted
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE