Advertisement
E-Paper

রেলশহরের পুরসভা ফের ত্রিশঙ্কুই

রেলশহরে ত্রিশঙ্কু কাঁটা। খড়্গপুর পুরসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না কোনও দল। আশঙ্কা সত্যি করে খড়্গপুরে পুরসভার ফল হল ত্রিশঙ্কু। মঙ্গলবার পুরভোটের ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, তৃণমূল ও কংগ্রেস যুযুধান দুই শিবিরই ১১টি করে আসনে জয়ী হয়েছে। লোকসভার ফল ধরে রাখতে না পেরে বিজেপিও ৭টি আসনে জয়ী হয়েছে।

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৭
জয়ী বিজেপি প্রার্থী বেলারানি অধিকারীকে ঘিরে সমর্থকদের উল্লাস। মঙ্গলবার।

জয়ী বিজেপি প্রার্থী বেলারানি অধিকারীকে ঘিরে সমর্থকদের উল্লাস। মঙ্গলবার।

রেলশহরে ত্রিশঙ্কু কাঁটা।

খড়্গপুর পুরসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না কোনও দল। আশঙ্কা সত্যি করে খড়্গপুরে পুরসভার ফল হল ত্রিশঙ্কু। মঙ্গলবার পুরভোটের ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, তৃণমূল ও কংগ্রেস যুযুধান দুই শিবিরই ১১টি করে আসনে জয়ী হয়েছে। লোকসভার ফল ধরে রাখতে না পেরে বিজেপিও ৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। বামেরা পেয়েছে ৬টি আসন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, লোকসভার ফলের ধারেকাছেও যেতে পারেনি গেরুয়া শিবির। শাসক দলেও বোর্ড গড়া থেকে অনেক দূরে। যদিও পুরবোর্ড গড়া নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাজনৈতিক দলগুলি।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই খড়্গপুরের ঝাপেটাপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ভোট গণনাকেন্দ্রের বাইরে ভিড় জমিয়েছিলেন বিভিন্ন দলের বহু সমর্থক। যত বেলা গড়িয়েছে, একের পর এক বিদায়ী কাউন্সিলরের হারে হতাশা বেড়েছে সাসক দলের নেতৃত্বের। ভোটের আগে খড়্গপুরের ১৬টি ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে ছিল। এ বার ৫টি আসন কমে তা হয়েছে ১১টি। তবে শাসক দলের এই বিপর্যয়ে খুশি বিরোধী শিবির। খড়্গপুরে পুরবোর্ড গড়তে গেলে ১৮টি আসন প্রয়োজন। যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছনো নিয়ে আশাবাদী ছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস শিবির। তবে কংগ্রেসের বিজয়রথও ১১-এর কোটায় এসে থমকে যায়।

খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠন নিয়ে চিন্তায় কংগ্রেসের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে।

ভোটের আগে বিজেপির দখলে ১টি আসন ছিল। এ বার পুরভোটে তা বেড়ে ৭টি হয়েছে। তবে গত লোকসভা ভোটে খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। খড়্গপুর পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ডেও এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। যদিও এ বার ৭টি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাদের। প্রশ্ন, লোকসভার ফল ধরে রাখা গেল না কেন? বিজেপির এক সূত্রে খবর, প্রার্থী নির্বাচনের সময় থেকেই একাধিক বার বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। দলের প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে একাংশ বিক্ষুব্ধ কর্মীর প্রতিবাদকে সাধারণ মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। বিজেপির এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘শাসকদলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য শহরে মজবুত সংগঠন এখনও গড়ে ওঠেনি। খারাপ ফলের এটাও একটা কারণ।’’

এ বিষয়ে শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “লোকসভায় বিজেপি যেমন সাফল্য পেয়েছিল সেই ফল ধরে রাখতে পারেনি। তবে আসন সংখ্যা বেড়েছে। তাই এই ত্রিশঙ্কু ফলের পিছনে বিজেপিরও প্রভাব রয়েছে।” বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝার কথায়, “শহরে দলের ফল লোকসভার তুলনায় খারাপ হয়েছে ঠিকই। তবে লোকসভা ও পুরসভা ভোটের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে মানুষ যে কংগ্রেস আর তৃণমূলকে চাইছে না সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।” যদিও বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “খড়্গপুরে ভোটের আগে থেকেই সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল। তাও এই ফল। শহরের মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।”

হিসেব কষতে ব্যস্ত তৃণমূল নেতৃত্বও।

গত পুরভোটে খড়্গপুরে বোর্ড দখল করেছিল তৃণমূল। যদিও পরে অনাস্থা এনে পুরবোর্ড দখল করে কংগ্রেস। এ বার ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল কংগ্রেস। তবে গতবারের থেকে এ বার কংগ্রেসের ৪টি আসন কমেছে। ২০১০-এর আগে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেসের খারাপ ফলের কারণ কী? কংগ্রেসের এক সূত্রে খবর, গত পুরভোটে কংগ্রেসের হারানো সমর্থন ফেরানো যায়নি। তাছাড়া সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়নি। এটাও খারাপ ফলের একটা কারণ। এ বিষয়ে খড়্গপুরের প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পালের বক্তব্য, ‘দলের ফল নিয়ে পরে পর্য়ালোচনা করা হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকায় রেল এলাকায় ওদের ফল ভাল হয়েছে।’’

পুরভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হওয়ায় বোর্ড গঠন নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এ বিষয়ে শহরের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “বোর্ড গঠনের বিষয়ে এখনও কিছুই ভাবা হয়নি। আমি না দলের সকলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।” এ বিষয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা জয়ী প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরীও একই সুরে বলেন, “এখন আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সিপিএমের সমর্থন নিলেও কংগ্রেস বোর্ড গড়তে পারবে না। কেননা, সেক্ষেত্রেও কংগ্রেস ও সিপিএমের মিলিত আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭। পুরবোর্ড গড়তে ১৮টি আসন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বিজেপি তৃণমূল বা কংগ্রেসকে সমর্থন করলে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছনো যাবে। যদিও এ বিষয়ে মুখে সব দলেরই।

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল এবং রামপ্রসাদ সাউ।

Municipal election Trinamool tmc Cpm congress bjp Kharagpur municipality Loksava Municipal election result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy