Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
খড়্গপুরে নেই নজরদারি

কর্মী কম, তাই শিকেয় নিরাপত্তা

গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এক খবর কাগজের এজেন্টের চোখে ধুলো দিয়ে টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

নজর-নেই: বোগদায় খড়্গপুর স্টেশনের প্রবেশপথে নেই কোনও নজরদারি। অবাধে ঢুকছেন যাত্রীরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নজর-নেই: বোগদায় খড়্গপুর স্টেশনের প্রবেশপথে নেই কোনও নজরদারি। অবাধে ঢুকছেন যাত্রীরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৮
Share: Save:

‘এ’ ওয়ান স্টেশন। দিনে গড়ে ২২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। অথচ এমন একটি স্টেশনের প্রবেশপথে নেই কোনও মেটাল ডিটেক্টর দরজা। নজরদারির কোনও বালাই নেই। অবাধে ঢুকছেন সকলে। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটিই মাত্র আরপিএফ বুথ। বাকি প্ল্যাটফর্মগুলিতে নেই কোনও আরপিএফ বুথও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ খড়্গপুর স্টেশনে নিরাপত্তার এমন হাঁড়ির হাল হলেও নজর নেই কারও।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এক খবর কাগজের এজেন্টের চোখে ধুলো দিয়ে টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। স্টেশনে থাকা ৫৬টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে মাত্র ১৪টি চালু থাকায় ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজও মেলেনি। ঘটনার পরে অবশ্য এখন ৫০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে শুধু সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়িয়ে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কতটা ঠেকানো সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

খড়্গপুর স্টেশনে ঘুরলেই চোখে পড়বে নিরাপত্তার ফাঁকফোকর। বোগদায় স্টেশনের মূল প্রবেশপথ দিয়ে অবাধে যাত্রীরা ঢুকছেন। ফুটব্রিজের তলায় একটি দোকানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রেল সুরক্ষা বাহিনীর (আরপিএফ) এক জওয়ান। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় আর কোনও আরপিএফ জওয়ান চোখে পড়েনি। টিকিট কাউন্টার থেকে সাবওয়ে দিয়ে অবাধে প্ল্যাটফর্মে যাতায়াত করছে যাত্রীরা। স্টেশনের ফুটব্রিজেও নিরাপত্তা শিকেয়। কোথাও কোনও ‘মেটাল ডিটেক্টর ডোর’ নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, কেউ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রী সেজে স্টেশন চত্বরে ঢুকলেও দেখার কেউ নেই।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ডিভিশনে রেল সুরক্ষা বাহিনীর মাত্র ১৪০০ জওয়ান রয়েছে। এখনও প্রায় ৬০০ জওয়ান প্রয়োজন। কিন্তু তা না মেলায় বসানো যাচ্ছে না ‘মেটাল ডিটেক্টর ডোর’, ‘লাগেজ স্ক্যানার’-এর মতো যন্ত্র। এখন দিনে মাত্র ৭০ জন জওয়ান তিনটি শিফটে কাজ করেন। একটি শিফটে ২৩-২৪ জন জওয়ান দিয়ে কী ভাবে এত বড় স্টেশন চত্বরের নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব তা নিয়েই প্রশ্ন। বিশেষ করে শীতকালে কুয়াশায় সন্ধের পর দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় নজরদারিতে ফাঁক আরও বাড়ে বলেই যাত্রীদের দাবি। রেল যাত্রী কমলিকা দে বলছেন, “খড়্গপুরে আত্মীয়ের বাড়ি থাকায় মাঝে মধ্যেই এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করি। এ বারও বড়দিনের ছুটিতে এসেছিলাম। এত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে সন্ধের পরেও রেল সুরক্ষা বাহিনীর টহলদারি চোখে পড়ে না।”

রেলের গতি বাড়াতে সম্প্রতি খড়্গপুর স্টেশনে চালু হয়েছে ‘ইলেকট্রনিক্স রুট ইন্টারলকিং ব্যবস্থা’। তবে স্টেশনের নিরাপত্তায় জোর দেওয়া হচ্ছে না কেন? রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল সেফটি কমিশনার অশোককুমার রায় বলেন, “আমাদের লোকবল কম। তাই ‘মেটাল ডিটেক্টর ডোর’ বসানো সম্ভব নয়। জওয়ান কম থাকলেও আমরা নজরদারি চালাচ্ছি। স্টেশনে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ রয়েছে। এ ছাড়াও সাদা পোশাকে ইন্টেলিজেন্স দল থাকে। তাঁরা সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তল্লাশি চালায়। নাশকতা রুখতে আমরা প্রস্তুত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur Rail station খড়গপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE