প্রায় ২৫ ফুট উঁচু ভীমের গলায় থরে থরে সাজানো অবস্থায় ঝুলছে অসংখ্য টাকার মালা। প্রায় এক লক্ষ টাকার ওই মালা-সহ বিশালাকার ওই ভীম মূর্তির পাশে সাজানো রয়েছে আরও প্রায় দেড়শোটি ভীমের প্রতিমা। মন্দিরের সামনে মহিলা পুরুষ, শিশু-কিশোর মিলিয়ে কয়েক হাজার ভক্তের ভিড়ে জমজমাট সারা মন্দির চত্বর।
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহরের লাগোয়া কুলবেড়িয়া গ্রামে ভীমপূজা উপলক্ষে বসেছে ভীম মেলা । ভীম একাদশী তিথিতে ভীমের আরধনা ঘিরে শুক্রবার থেকে গ্রামের হাইস্কুল সংলগ্ন মাঠে বসেছে ওই মেলার আসর। গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, ১২০ বছরের প্রাচীন এই ভীম মেলা। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এই ভীমপূজার আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতি বছর মেলার সময় ভিড় জমান দূর থেকে বহু ভক্তের দল। ভীমের মন্দিরে পূজা দিতে এসেছিলেন গণপতিনগর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা নন্দরাণী সামন্ত। ৭৬ বছরের ওই প্রবীণা বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই এই মেলায় আসছি। মাঝে মাঝে মেলা আসায় ছেদ পড়ে ঠিকই। তবে ভীমমেলার টানে এবারও এলাম।’’
এ দিন ভীম মন্দিরে পূজা দিতে সপরিবারে এসেছেন পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুর এলাকার কলাগেছিয়া গ্রামের বাসিন্দা হৃষীকেশ দাসঅধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘অনেকদিন ধরেই এই ভীমের মেলার কথা শুনেছি। এবার বাড়ির সবাই মিলে পুজো দিতে এসেছি। বিকেলে মেলা দেখে বাড়ি ফিরব।’
কুলবেড়িয়া গ্রামের ভীমের মন্দিরেই উল্লেখ করা রয়েছে প্রতিষ্ঠাকাল বাংলা ১৩০৫ সাল। অর্থাৎ এবার ১২০ বছরে পা দিয়েছে এই ভীমের পুজো। গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছরের গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘১২০ বছরের ঐতিহ্য বজায় রেখে এখনও পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। আর মেলায় লোক সমাগম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’’ ভীমের মন্দিরে পুজো উপলক্ষে সামনে মেলার মাঠে বসেছে মিষ্টি, খাওয়ার দোকান নানা জিনিসপত্রের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মাঠে থাকছে পুতুলনাচ, যাত্রা-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর।
কুলবেড়িয়া ভীমমেলা কমিটির সভাপতি তথা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য কালীপদ ঘোষ বলেন, ‘‘বাজেট প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। ভীমের উদ্দেশে ভক্তদের দেওয়া টাকা-সহ বিভিন্ন সাহায্য ছাড়াও গ্রামের বাসিন্দাদের দেওয়া অর্থে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মেলা চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।’’