Advertisement
E-Paper

পুজোয় বেড়ানোর ঠিকানা লালজল

পাহাড়ের মাঝে ছবির মতো গ্রাম লালজল। বেলপাহাড়ির এই গ্রামে আছে আদিম মানবের গুহা-সহ বহু প্রাচীন নিদর্শন। প্রত্ন-গবেষকদের ধারণা, কয়েক হাজার বছর আগে লালজলই ছিল প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ক্ষেত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৪৩
পাহাড়ের উপর থেকে লালজল গ্রাম। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

পাহাড়ের উপর থেকে লালজল গ্রাম। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

পাহাড়ের মাঝে ছবির মতো গ্রাম লালজল। বেলপাহাড়ির এই গ্রামে আছে আদিম মানবের গুহা-সহ বহু প্রাচীন নিদর্শন। প্রত্ন-গবেষকদের ধারণা, কয়েক হাজার বছর আগে লালজলই ছিল প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ ক্ষেত্র। এখানকার ঝরনার জল সামান্য লালচে। তামা ও লোহা মিশ্রিত জল বেশ সুস্বাদু। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, লাল রঙের এই জলের কারণেই গ্রামটির নাম লালজল। বেলপাহাড়ি থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পিচ রাস্তা ধরে ১৯ কিমি যাওয়ার পরে পড়বে লালজল মোড়। সেখান থেকে ডান দিকে লাল পাথুরে-মাটির রাস্তায় পাহাড়ি চড়াই-উত্‌রাই পেরিয়ে ২ কিমি মতো এগোলেই লালজল। চার দিকে পাহাড়ের মাঝে এই গ্রাম। গ্রামের পশ্চিমে দেওপাহাড়ে রয়েছে আদিম মানবের গুহা। দক্ষিণ-পূর্ব অংশ জুড়ে সিংলহর পাহাড়ের শ্রেণি। আর গ্রামের উত্তরে রয়েছে রানিপাহাড়। প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষী এমন একটি জায়গা অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে। অপূর্ব নৈসর্গিক এলাকাটি অনায়াসেই হতে পারত অসাধারণ এক পর্যটন কেন্দ্র।

দেওপাহাড়ে আদিম মানবের গুহাটি দেখতে হলে পাহাড়ের খাঁজ ধরে সতর্ক ভাবে উঠতে হবে। গুহার মুখ এতটাই অপরিসর যে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হবে। সঙ্গে টর্চ রাখলে ভাল। কারণ, সেখানে এখন বাদুড়-সজারুর আস্তানা। গুহার ভিতরের দেওয়ালে খোদাই করা আছে নানা ধরনের ছবি। একটি ছবিতে একাধিক রঙের ব্যবহার রয়েছে। যদিও সেগুলি গুহার ভিতরে না ঢুকলে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন কেউ আর গুহায় ঢোকার সাহস দেখান না। জ্যোত্‌স্না রাতে লালজলের সৌন্দর্যও দেখার মতো।

ঝাড়গ্রামের লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানালেন, এক সময় এই গুহার বিভিন্ন স্তর থেকে আদিপ্রস্তর, মধ্যপ্রস্তর নব্যপ্রস্তর, তাম্রপ্রস্তর ও লৌহপ্রস্তর যুগের নিদর্শন মিলেছিল। এর মধ্যে রয়েছে পাথরের লাঙল, নীল গাইয়ের হাড়ের ফসিল, পাথরের তিরের ফলা, পাথরের ত্রিভুজাকৃতি চপার, তামার কুঠার ইত্যাদি। এই সব নিদর্শন ভারতীয় যাদুঘর ও দিল্লির জওহরলাল নেহেরু মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। নীলগাই সহ আরও কিছু প্রাণীর জীবাশ্মও মিলেছে এখানে। লালজল গ্রামের আশেপাশে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন যুগের লৌহ নিষ্কাশনের অবশেষ। এক সময় লালজল নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সত্তর ও আশির দশকে টানা বারো বছর ধরে লালজলে ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজ করেছিলেন রাজ্যের তত্‌কালীন প্রত্নবস্তু সহায়ক বিশ্বনাথ সামন্ত। ওই সময়ই প্রাচীন নিদর্শনগুলির হদিস মেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা চুনারাম মাহাতো, অজিত মাহাতো, বিষ্ণু মাহাতোরা জানালেন, ষাটের দশকে লালজলের গুহায় একটি চিতাবাঘও ছিল। জনশ্রুতি, ওই বাঘের সঙ্গেই গুহায় থাকতেন রামস্বরূপ নামে এক সন্ন্যাসী। ১৯৮৩ সালে রামস্বরূপের উদ্যোগে লালজলে বাসন্তী পুজোর প্রচলন হয়। ১৯৯৫ সালে রামস্বরূপের মৃত্যুর পরে তাঁকে দেওপাহাড়ের কোলে সমাধিস্থ করা হয়। এখনও বাসন্তী পুজোর চল রয়েছে। সে সময়ে পাঁচ দিনের মেলা বসে লালজলে। চুনারামবাবুদের আক্ষেপ, প্রশাসনিক উদাসীনতায় ও অবহেলায় লালজলের প্রাচীন নিদর্শনগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে।

সম্প্রতি লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মধূপ দে ও ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের অধ্যাপক সুশীল বর্মন লালজলে ক্ষেত্র সমীক্ষা করতে গিয়েছিলেন। সুব্রতবাবু বলেন, “বেলপাহাড়িতে যে এমন আদিম সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে, সেটা অনেকের কাছেই অজানা। গুহার ভিতর পরিষ্কার করে এখানে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এলাকাবাসীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

laljal puja puja tour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy