Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সেনগুপ্ত পরিবারে দুর্গারূপে পূজিতা ত্রিনয়নী লক্ষ্মী 

লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকার সামনে রাখা হয় কালীঘাটের পটুয়াদের তৈরি মাটির সরায় আঁকা দুর্গা। সরায় দুর্গার পায়ের তলায় থাকেন ত্রিনয়নী লক্ষ্মী। 

একই সরায় দুর্গা ও লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

একই সরায় দুর্গা ও লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

নবপত্রিকাকে সামনে রেখে দুর্গারূপেই পূজিতা হন সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মী। ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেনগুপ্ত বাড়ির প্রায় তিনশো বছরের পুরনো কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় এমনই প্রথা চলে আসছে।

লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকার সামনে রাখা হয় কালীঘাটের পটুয়াদের তৈরি মাটির সরায় আঁকা দুর্গা। সরায় দুর্গার পায়ের তলায় থাকেন ত্রিনয়নী লক্ষ্মী।

কেন এমন প্রথা? সেনগুপ্ত পরিবারের প্রবীণা আলো সেনগুপ্ত জানালেন, সেনগুপ্তদের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের বান্ধব-দৌলতপুর গ্রামে। পূর্ববঙ্গে তিনশো বছর আগে পাবিবারিক দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সঙ্গে হত কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনাও। ১৭৫২ সালে গৃহকর্তা পেশায় প্রখ্যাত কবিরাজ রামগতি সেনগুপ্তর আমলে পুজোর জৌলুস বাড়ে। দেশভাগের পরে রামগতির উত্তরসূরিরা পূর্ববঙ্গ থেকে ঝাড়গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেনগুপ্ত পরিবারের আবাসস্থল ‘রজনী কুটির’। পূর্ববঙ্গের বসতবাটি ছেড়ে এলেও ঐতিহ্যের পুজো ছাড়তে পারেননি সেনগুপ্তরা।

১৯৪৮ সাল থেকে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে সেনগুপ্তদের পারিবারিক দুর্গাপুজো ও কোজাগরী লক্ষ্মী আরাধনা শুরু হয়। পরিবারের দাবি, পূর্ববঙ্গ থেকে ধরলে পুজোর বয়স তিনশো ছাড়িয়েছে। সেনগুপ্তরা শক্তির উপাসক। তাই কোজাগরী পূর্ণিমায় মাটির সরায় আঁকা দুর্গার সঙ্গে ত্রিনয়নী লক্ষ্মীর পুজো হয়। পরিবারের সদস্য দীপঙ্কর সেনগুপ্ত, সঙ্গীতা সেনগুপ্তরা জানান, পূর্ণিমা তিথি শুরু হওয়ার আগে বাগান থেকে কলা গাছ তোলা হয়। তরপর সেই কলাগাছের সঙ্গে কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান একত্রে একজোড়া বেলের সঙ্গে শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয়। তবে দুর্গাপুজোর মতো লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকার স্নান হয় না। দুর্গা পুজোটি হয় দুর্গা দালানে। তবে লক্ষ্মী পুজো হয় বাড়ির ভিতরে। জনশ্রুতি, বাংলাদেশে দুর্গা পুজোর ভোগদানের সময়ে একবার বর্গি-হানায় ঠাঁইনাড়া হন সেনগুপ্তরা। সেই থেকে যে কোনও পুজোয় রান্না করা অন্নভোগ দেওয়া বন্ধ। লক্ষ্মীপুজোয় অন্নভোগের পরিবর্তে লুচি, পঞ্চব্যঞ্জন, সুজি, নারকেল নাড়ু, গুড় মেশানো ঝুরঝুরে খই নিবেদন করা হয়।

পুজোর একটি বিশেষ অনুষঙ্গ হল বাণিজ্যতরী সাজানো। কলা গাছের ছালের পেটো দিয়ে এই বাণিজ্যতরী সাজানো হয় ঘটের সামনে। তাতে পঞ্চশস্য, সোনা, রুপো-সহ পঞ্চরত্ন দেওয়া হয়। লক্ষ্মী পুজোর নবপত্রিকার শাড়ি কেবল পরিবারের মহিলারাই ব্যবহার করেন।

পুজোর জৌলুস এখন কমে গিয়েছে। পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের অনেকেই প্রয়াত। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে কেউই থাকেন না। পারিবারিক পুজো টিকিয়ে রাখার জন্য কলকাতা থেকে প্রতিবছর আসেন রামগতির উত্তরসূরিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Laxmi puja Sengupta Family Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE