Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Leopard

হর্ষিণীর শাবক স্নেহ, ইঙ্গিত ফুটেজে

ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের স্ত্রী চিতাবাঘ হর্ষিণী গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় তিনটি শাবক প্রসব করে। তারপর থেকে তাদের ২৪ ঘন্টা সিসি ক্যামেরায় নজরদারি করছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।

মাংসের সঙ্গে স্তন্যদুগ্ধ বাড়ানোর ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর ফলে মাতৃত্ববোধ জাগছে চিতাবাঘিনীর।

মাংসের সঙ্গে স্তন্যদুগ্ধ বাড়ানোর ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর ফলে মাতৃত্ববোধ জাগছে চিতাবাঘিনীর।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৫
Share: Save:

শাবক স্নেহ জাগছে কি জাগছে হর্ষিণীর!

সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে মিলছে তেমনই ইঙ্গিত। মাংসের সঙ্গে স্তন্যদুগ্ধ বাড়ানোর ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর ফলে মাতৃত্ববোধ জাগছে চিতাবাঘিনীর। এমনই মনে করছেন প্রাণী চিকিৎসকরা। শাবকদের স্তন্যপান করাচ্ছে হর্ষিণী।তাদের গা চেটে আদরও করছে। সিসি ক্যামেরায় ফুটেজে উঠে এসেছে তেমনই ছবি।

ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের স্ত্রী চিতাবাঘ হর্ষিণী গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় তিনটি শাবক প্রসব করে। তারপর থেকে তাদের ২৪ ঘন্টা সিসি ক্যামেরায় নজরদারি করছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের আধিকারিকরাও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আধ ঘন্টা অন্তর মোবাইল ফোনে হর্ষিণী ও শাবকদের গতিবিধির উপর নজর রাখছেন। হর্ষিণী অসম্ভব হিংস্র প্রকৃতির। তাই সে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরই তাকে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে লোকচক্ষুর আড়ালে আলাদা একটি ঘরে (নাইট শেল্টার) রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। দুই কামরার সেই ঘরের চারপাশ এমনভাবে ঢাকা যাতে বাইরের কোলাহল সেখানে পৌঁছতে না পারে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এবং প্রসবের পর হর্ষিণীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, হর্ষিণীর খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন রয়েছে ৫ কেজি কাঁচা মাংস। বৃহস্পতিবার হর্ষিণীকে মুরগির মাংস দেওয়া হয়। সপ্তাহের বাকি ছ’দিন দেওয়া হয় রেড মিট (গরুর মাংস)। তবে সেই মাংসের সঙ্গে নানা ধরনের ওষুধ মিশিয়ে হর্ষিণীকে খেতে দেওয়া হচ্ছে। মূলত স্তন্যদুগ্ধ বাড়ানোর ওষুধের পাশাপাশি, নানা ধরনের ভিটামিনও মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে স্ত্রী চিতাবাঘটিকে। সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, শাবক তিনটির স্বাস্থ্য বেশ ভাল।

চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক চঞ্চল দত্ত বলছেন, ‘‘স্তন্যদুগ্ধ বাড়ায় হর্ষিণীর মধ্যে মাতৃত্ববোধ জেগেছে বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। শাবকদের নিয়মিত স্তন্যপান করাচ্ছে হর্ষিণী।’’ বন দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, হর্ষিণীর মেজাজ যাতে কোনও ভাবেই বিগড়ে না যায়, সে জন্য তার ঘরের ধারেপাশে চিড়িয়াখানার অন্য কর্মীরা যাচ্ছেন না। কেবল একজন কর্মী যিনি গত চার বছর ধরে চিতাবাঘের এনক্লোজারে খাবার দেন, তিনিই প্রতিদিন ধীর পায়ে হর্ষিণীর ঘরে গিয়ে খাবার রেখে আসছেন। তাঁর গায়ের গন্ধের সঙ্গে হর্ষিণী পরিচিত।

হর্ষিণীর অতীতের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের গোড়ায় ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় পুরুষ চিতাবাঘ সোহেলের সঙ্গে মিলনের ফলে প্রথমবার শাবক প্রসবের পর নিজের সন্তানদের খেয়ে ফেলেছিল সে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বার দু’টি শাবক প্রসব করেছিল হর্ষিণী। সেবার হর্ষিণী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরই তাকে ও সোহেলকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে সোহেল আলাদা এনক্লোজারে রয়েছে। হর্ষিণীর সেই দুই শাবককে বাঁচানোর জন্য সেবারও চিড়িয়াখানার প্রাণিচিকিৎসক ও কর্মীরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে শাবক দু’টি হর্ষিণীর স্তন্যপান করে বড় হয়ে ওঠে। হর্ষিণীর ঘেরাটোপে বেড়ে ওঠা সেই দুই শাবক ‘সুলতান’ ও ‘শাহাজাদ’ এখন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের সঙ্গে এক এনক্লোজারে থাকার ফলে ‘ইনব্রিডিং’য়ে হর্ষিণী তৃতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। ফলে হর্ষিণীর সদ্যোজাত শাবকদের বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না চিড়িয়াখানা কর্মীরা।

প্রাণী চিকিৎসকরা বলছেন, শাবকগুলির বয়স মাস খানেক হয়ে গেলে আর চিন্তার কিছু নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE