E-Paper

ক্ষুদিরামের গ্রামে তালাবন্ধ পাঠাগার

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কেশপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। মোহবনিতেই ক্ষুদিরাম বসুর পৈতৃক ভিটে রয়েছে। পাঠাগারের কিছু দূরেই সেই ভিটে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৩
বন্ধ পাঠাগার।

বন্ধ পাঠাগার। নিজস্ব চিত্র।

গ্রন্থাগারিকের বদলি হয়েছিল আগেই। একমাত্র কর্মীর ভরসায় চলছিল গ্রামীণ পাঠাগারটি। তিনি অবসরগ্রহণ করেছেন। তারপর থেকেই পাঠাগারটির ফটকে তালা ঝুলছে। তালা খোলারই যে লোক নেই! মাস খানেক ধরে তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের মোহবনির শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি পাঠাগার।

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কেশপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। মোহবনিতেই ক্ষুদিরাম বসুর পৈতৃক ভিটে রয়েছে। পাঠাগারের কিছু দূরেই সেই ভিটে। মোহবনিতে শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি রক্ষা সমিতিও রয়েছে। সেই সমিতির সভাপতি তথা কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিত্ত গড়াই এই পাঠাগারের সমস্যার কথা মানছেন। চিত্ত বলেন, ‘‘সপ্তাহ কয়েক হল, এই পাঠাগারটি বন্ধ। আসলে এখানে যে গ্রন্থাগারিক ছিলেন, মাস কয়েক আগে তাঁর বদলি হয়েছে। একজন কর্মী ছিলেন। জানুয়ারির শেষে তিনি অবসর নিয়েছেন। তাই এই সমস্যা। বিষয়টি জেলার গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গ্রন্থাগার আধিকারিক শেখ মহম্মদ শহিদুল্লাহের আশ্বাস, ‘‘খুব শীঘ্রই ওই গ্রন্থাগারে কর্মী পাঠানো হবে।’’

জেলায় যে সংখ্যক গ্রন্থাগার রয়েছে, তুলনায় গ্রন্থাগারিক-কর্মীর সংখ্যা কম। ফলে একজনকে একাধিক গ্রন্থাগারের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। জেলায় গ্রন্থাগার রয়েছে সবমিলিয়ে প্রায় ১১৫টি। সেখানে গ্রন্থাগারিক রয়েছেন প্রায় ৭৫ জন। জানা গিয়েছে, মোহবনির ওই গ্রন্থাগারে যিনি গ্রন্থাগারিক ছিলেন, তিনি শারীরিক কারণে বদলি চেয়েছিলেন। কয়েক মাস আগেই তাঁর বদলি হয়েছে শালবনির একটি গ্রন্থাগারে। তপন রায় নামে এক কর্মীর ভরসায় চলছিল এই গ্রন্থাগারটি। তপন চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অবসর নিয়েছেন। তপন বলছেন, ‘‘আমি অবসর নিয়েছি গত জানুয়ারিতে। বলতে পারেন, তারপর থেকেই গ্রন্থাগারটি বন্ধ। প্রায় ২৯ বছর আমি কাজ করেছি এখানে। তালার চাবিটা আমার কাছেই আছে। মাঝেমধ্যে খুলে বসি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার অবসরের পরে আর কোনও কর্মী আসেননি এখানে। হয়তো শীঘ্রই আসবেন।’’

মোহবনিতে এই পাঠাগারটি গড়ে ওঠে ১৯৯৪ সালে। এই গ্রামীণ গ্রন্থাগারে পাঁচ হাজারের বেশি বইপত্র রয়েছে। এলাকার মানুষের অত্যন্ত প্রিয় এই পাঠাগার। খোলা থাকলে লোকজন আসেন। কেউ পাঠ্যবইয়ের খোঁজে, কেউ বা ‘রেফারেন্স’ বইয়ের খোঁজে। স্থানীয়দের একাংশের মতে, পাঠাগারটি চালানোর কর্মী না এলে, শুধু যে নিয়মিত পাঠকেরা তাঁদের প্রিয় গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই পাবেন না, তা নয়, যে সব ছেলেমেয়ে ‘রেফারেন্স’ বইয়ের খোঁজে আসে, তারাও সমস্যায় পড়বে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের ‘পাবলিক লাইব্রেরি’ শাখার জেলা সম্পাদক প্রদ্যোত মাসান্ত মানছেন, ‘‘ওখানে সমস্যা বলতে ওখানে গ্রন্থাগারিক নেই। এক কর্মী ছিলেন, তিনি অবসর নেওয়ার পরে গ্রন্থাগারটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সমস্যার বিষয়টি আমরাও জেলার গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ পাঠাগারটির পরিচালন কমিটির সম্পাদক তিলক বসু বলেন, ‘‘আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’’

স্থানীয়দের অনেকে চাইছেন, আপাতত সপ্তাহে দু’-তিন দিন হলেও খুলুক গ্রন্থাগারটি। কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও খুলুক। এক পাঠকের আশঙ্কা, ‘‘অনেক দিন বন্ধ থাকলে, বই নষ্ট হওয়ার ভয় তো থেকেই যায়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Keshpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy