Advertisement
০৭ মে ২০২৪
দু’টি কাউন্টার মেদিনীপুর মেডিক্যালে

দু’ঘণ্টা লাইন দিয়ে মেলে ওষুধ

দিন কয়েক আগের দুপুর। দফতরে বসে কাজ সারছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের দুই সহকারী সুপার সুমনদেব চক্রবর্তী এবং প্রণবেশ রায়। হঠাৎই মালতী দাস নামে বছর পঞ্চান্নর এক মহিলা দফতরে ঢুকে বলে উঠলেন, ‘ওষুধ দেওয়ার লাইনে অনেক ভিড়। দু’ঘন্টা দাঁড়িয়ে ওষুধ পেলাম। তার উপর ওখানে একটা পাখা পর্যন্ত নেই। কিছু কি করা যায় না?’

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ওষুধের কাউন্টারে লম্বা লাইন। — নিজস্ব চিত্র

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ওষুধের কাউন্টারে লম্বা লাইন। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০১:০৭
Share: Save:

দিন কয়েক আগের দুপুর। দফতরে বসে কাজ সারছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের দুই সহকারী সুপার সুমনদেব চক্রবর্তী এবং প্রণবেশ রায়। হঠাৎই মালতী দাস নামে বছর পঞ্চান্নর এক মহিলা দফতরে ঢুকে বলে উঠলেন, ‘ওষুধ দেওয়ার লাইনে অনেক ভিড়। দু’ঘন্টা দাঁড়িয়ে ওষুধ পেলাম। তার উপর ওখানে একটা পাখা পর্যন্ত নেই। কিছু কি করা যায় না?’

মালতিদেবীর কথা শুনে কী জবাব দেবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না দুই সহকারী সুপার। পরে মহিলাকে তাঁদের আশ্বাস, ‘এটা একটা সমস্যা। কী করা যায় দেখছি।’

ওই ঘটনার সময় সহকারী সুপারের দফতরে ছিলেন হাসপাতালের এক কর্মীও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রায় সকলেই নিজের সমস্যা নিয়ে সুপার, সহকারী সুপারের দফতরে আসেন। ওই মহিলা কিন্তু সকলের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা উচিত!’’

সত্যিই কি কিছু ভাবছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ?

হাসপাতালের সুপার যুগল কর বলেন, “ওষুধ দেওয়ার জায়গায় আগে ছাউনি ছিল না। মাস কয়েক আগে ছাউনি করে দেওয়া হয়েছে। পাখা না থাকার ফলে সমস্যা হয় ঠিকই। পাখা রাখা যায় কি না দেখছি।’’

সমস্যা কিন্তু শুধু ছাউনি দিয়ে বা পাখা বসিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। তাতে হয়তো কিছুটা সুরাহা হবে মাত্র। তবে মাত্র দু’টি কাউন্টার থেকে ওষুধ বিলি করে বিপুল ভিড় সামলানো সম্ভব নয়। দুই মেদিনীপুরের একমাত্র এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওষুধের কাউন্টারে রোজই লম্বা লাইন পড়ে। দু’টি কাউন্টারের একটিতে সাধারণত পুরুষদের লাইন থাকে, অন্যটিতে মহিলাদের।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে এখন শয্যা রয়েছে ৫৬০টি। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০০-৭৫০ জন। এঁদের ওষুধও এই কাউন্টার থেকেই নিতে হয়। হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, মাসে বহির্বিভাগে রোগী আসেন গড়ে ১৫,৯০০। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ৫৩০ জন। জরুরি বিভাগে মাসে গড়ে রোগী আসেন ৬,৫৭০ জন। দিনে গড়ে ২২০ জন। আর প্রতি ঘন্টায় ৯-১০ জন। এঁদের বেশিরভাগই হাসপাতাল থেকে ওষুধ নেন। অথচ সেখানে কাউন্টার মাত্র দু’টি। ফলে, যতক্ষণ কাউন্টার খোলা থাকে, সব সময়ই সেখানে লম্বা লাইন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রতিদিন গড়ে ১,১০০ মানুষ ওষুধ নেন এখান থেকে। বেশিরভাগই বহির্বিভাগে আসা রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা।

তা ছাড়া, সুপার ছাউনির কথা বলছেন বটে, কিন্তু তা-ও খুব বড় এলাকা জুড়ে করা হয়নি। লাইনে ১৫-২০ জনের পরে দাঁড়াতে হলে রোদ মাথায় নিয়েই দাঁড়াতে হয়। তার উপর ছাউনির জায়গায় পাখা না থাকায় এই গরমে ভোগান্তি চরমে ওঠে। বাসন্তী মুর্মু, অসিত বসাকের মতো রোগীর পরিজনেদের কথায়, ‘‘এত বড় হাসপাতালে এই পরিষেবা থাকবে না এটা ভাবাই যায় না। ওষুধ নিতে এসে প্রতিদিন কত মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। তা-ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন।’’

এত মানুষ ওষুধ নিতে আসেন। তা-ও কেন কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি?

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কর্মী সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই নতুন করে কিছু করা সম্ভব হয়নি। শুধু কাউন্টার খুলে দিলেই তো হল না। তা সচল রাখাও জরুরি। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “কর্মী সংখ্যা কম থাকায় কিছু সমস্যা হয়ই।” হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, মেডিক্যালে যেখানে ১৬৭ জন কর্মী থাকার কথা, সেখানে রয়েছেন ৮৬ জন। ডাক্তার কম, কর্মী কম। তাই ন্যূনতম পরিষেবাগুলোও সময় মতো মেলে না। হাসপাতালের নিজের রোগ না সারলে দুর্ভোগ তো চলতেই থাকবে!

মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের অদূরে, বহির্বিভাগের ঠিক পিছনের দিকেই রয়েছে ওষুধ বিলির কাউন্টার। পাশে হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর। গা-ঘেঁষে চলে গিয়েছে বটতলাচক-নান্নুরচক রাস্তা। জঙ্গলমহলের এই জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতিতে প্রথম বার ক্ষমতায় এসেই নানা পরিকল্পনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছু কাজও হয়েছে। কিছু কাজ চলছেও। তা-ও কেন জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র মেদিনীপুর মেডিক্যালে ওষুধ নিতে আসা রোগী এবং রোগীর পরিজনদের দীর্ঘক্ষণ ঘেমেনেয়ে অপেক্ষা করতে হবে, কেন বাড়তি কাউন্টারের ব্যবস্থা করা হবে না, ন্যূনতম একটা পাখা থাকবে না সেই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে মেডিক্যালের একের পর এক দফতরে যেখানে এসি বসেছে!

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বার কিছু একটা করা হবেই। প্রয়োজনে চারপাশে রেলিং দিয়ে ঘিরে পাখা বসানো হবে। যাতে পাখা চুরি না যায়।

আশ্বাস দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। এ বার নিত্য দুর্ভোগের ছবিটা সত্যি বদলায় কি না, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Long waiting Midnapore Medical College Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE