Advertisement
E-Paper

এম এ, বি এ পাশ করে নর্দমা সাফাই!

কাজে নেমে নর্দমা সাফাইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে ঝুড়ি ও কোদাল। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। অভিযোগ, কর্মীদের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় অল্প পারিশ্রমিকে সাফাইয়ের কাজে বাড়ছে অনীহা!

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
এভাবেই নর্দমা সাফাই করতে হচ্ছে গ্রামীণ সম্পদ কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র

এভাবেই নর্দমা সাফাই করতে হচ্ছে গ্রামীণ সম্পদ কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি মোকাবিলায় নামানো হয়েছে গ্রামীণ সম্পদ কর্মীদের। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পতঙ্গবাহিত রোগের সমীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে।

কাজে নেমে নর্দমা সাফাইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে ঝুড়ি ও কোদাল। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। অভিযোগ, কর্মীদের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় অল্প পারিশ্রমিকে সাফাইয়ের কাজে বাড়ছে অনীহা! ফলে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

পেটের দায়ে উচ্চশিক্ষিত হয়েও অল্প পারিশ্রমিকে সমীক্ষার কাজে নেমেছিলেন গ্রামীণ সম্পদ কর্মীরা। সেই সঙ্গে জুড়েছিল পতঙ্গ বাহিত রোগ মোকাবিলার দায়িত্ব। কিন্তু এখন ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে নেমে কোদাল ধরে নর্দমা সাফাই করতে হওয়ায় কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন ওই কর্মীরা। তার উপরে প্রতিটি ব্লকে ১৫ জন কর্মীর জায়গায় ৭-৮ জন কর্মী থাকায় অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন ওই গ্রামীণ সম্পদ কর্মীরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৪ সাল নাগাদ প্রতি ব্লকে সামাজিক সমীক্ষার কাজে নেওয়া হয়েছিল এলাকার বেকার যুবকদের। যোগ্যতা ছিল ন্যূনতম মাধ্যমিক। অবশ্য তখন থেকেই স্নাতক, স্নাতকোত্তর যুবক-যুবতীরা ওই কাজে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। তখন মাসে পাঁচদিন করে কাজ পেতেন তাঁরা। ২০১৬ সালে গ্রামীণ সম্পদ কর্মী হিসাবে পরীক্ষায় সফল হয়ে বছরে ১৫ দিনের কাজ পান ওই যুবক-যুবতীরা। এর পরে ২০১৮ সালে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গি সমীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পেয়ে দিনে ১৫০ টাকা পারিশ্রমিকে মাসে ২০ দিন কাজ শুরু করেন ওই গ্রামীণ সম্পদ কর্মীরা। সেই নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচিতেই এখন লার্ভা মারার তেল স্প্রে, নর্দমা সাফাইয়ের কাজ করতে বলা হচ্ছে। এতেই ক্ষোভ বাড়ছে উচ্চশিক্ষিত যুবক-যুবতী ওই সম্পদ কর্মীদের।

ওই সম্পদ কর্মীদের দাবি, সামান্য পারিশ্রমিকে নর্দমা সাফাইয়ের কাজে উচ্চশিক্ষিতদের সম্মানহানি হচ্ছে। ঘটনার কথা অকপটে স্বীকার করছেন ওই কর্মীরা। পিংলার জলচক-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী প্রশান্ত ভৌমিক বলেন, “আমি নিজে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। আগে জেনেছিলাম সমীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। কিন্তু এখন নর্দমা সাফাই করতেও বলা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে সম্মানে আঘাত লাগছে। একশো দিনের কাজের শ্রমিকের থেকেও কম পারিশ্রমিকে এমন কাজে অনেকের অনীহা আসছে।” একই কথা বলছেন ডেবরা ব্লকের ডুঁয়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্পদ কর্মী সৌমেন পাল। তিনি বলেন, “স্নাতক পাশ করে কী আর নর্দমা পরিস্কার করতে ইচ্ছে হয়! পেটের দায়ে করছি। তাই আমরা চাই উপযুক্ত বেতন দেওয়া হোক।” এসবের জেরে জেলার পিংলা, নারায়ণগড়, সবং, খড়্গপুর-১, মেদিনীপুর সদর, ডেবরার মতো ডেঙ্গি প্রবণ এলাকাতেও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন ব্লকবাসী। বালিচকের বাসিন্দা চন্দন পাল বলেন, “আমাদের এলাকায় যেভাবে জল জমে তাতে ডেঙ্গি হানা দিতে পারে। কিন্তু ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।”

ইতিমধ্যেই অবশ্য বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে সারা বাংলা গ্রামীণ সম্পদ কর্মী সংগঠনের জেলা শাখা। সংগঠনের রাজ্য সহ-সম্পাদক অভিজিৎ জানাও বলছেন, “নিয়ন্ত্রণ মানে নিজে হাতে নর্দমা সাফ করা নয়। কিন্তু নর্দমা পরিষ্কারে এখন আমাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।” ঘটনার কথা মানছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ঘটনা বাস্তব। প্রতিদিনই শুনছি উচ্চশিক্ষিত বলে ওই কর্মীরা ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে অনীহা দেখাচ্ছেন। কিন্তু সেটা হলে চলবে না। কাজের শর্ত অনুযায়ী উচ্চশিক্ষিত হলেও প্রয়োজনে নর্দমা সাফাই করতে হবে।”

Garbage Cleaning Dengue Dengue Prevention
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy