নবম শ্রেণিতে তাদের নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন) হয়েছিল। তবে মাধ্যমিকে অবশ্য তারা বসছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরে এমন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬,৫০৯! এরমধ্যে ছাত্র ৩,৯৪৪। ছাত্রী ২,৫৬৫।
স্কুলছুট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষামহলের একাংশের মতে, এদের বড় অংশই স্কুলছুট (ড্রপ আউট) হয়েছে। নবম শ্রেণিতে নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন) হয়েছিল ৫৯,৪০১ ছাত্রছাত্রীর। এদের মধ্যে ছাত্র ২৮,৬২০। ছাত্রী ৩০,৭৮১। এদেরই এ বার মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল। ওই ৫৯,৪০১ জনের মধ্যে মেদিনীপুর সদর মহকুমার ১৯,৫২৫ জন (ছাত্র ৯,৫১৪, ছাত্রী ১০,০১১), খড়্গপুর মহকুমার ২৬,৮৩৫ জন (ছাত্র ১৩,১২৬, ছাত্রী ১৩,৭০৯), ঘাটাল মহকুমার ১৩,০৪১ জন (ছাত্র ৫,৯৮০, ছাত্রী ৭,০৬১)।
কাল, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক। এই জেলায় শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিকে বসছে ৫২,৮৯২ জন ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে ছাত্র ২৪,৬৭৬। ছাত্রী ২৮,২১৬। ওই ৫২,৮৯২ জনের মধ্যে মেদিনীপুর সদর মহকুমার ১৬,৯৭৮ জন (ছাত্র ৭,৮৭২, ছাত্রী ৯,১৫১)। খড়্গপুর মহকুমার ২৪,০৭১ জন (ছাত্র ১১,৭২১, ছাত্রী ১২,৩৫০)। ঘাটাল মহকুমার ১১,৮৪৩ জন (ছাত্র ৫,১২৮, ছাত্রী ৬,৭১৫)।
নবম শ্রেণিতে নথিভুক্তি হয়েও মাধ্যমিকে না বসা পড়ুয়ারা শতাংশের নিরিখে ১০.৯৫ শতাংশ। একাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, এদের সকলেই যে স্কুলছুট হয়েছে, এমনটা নয়। কেউ কেউ নবম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হয়েছে। কেউ কেউ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। একাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ মানছেন, কিছু মেয়ের কম বয়সেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারা আর স্কুলমুখো হচ্ছে না। কিছু ছেলে কাজের খোঁজে স্কুল ছাড়ছে। কেউ নিজের এলাকায় থেকে দিনমজুরি করছে। কেউ কেউ কাজের খোঁজে ভিন্ জেলা, এমনকি ভিন্ রাজ্যেও চলে যাচ্ছে।
শালবনির জয়পুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকায় বাল্যবিবাহের সমস্যা রয়েছে। আমরা সচেতনতা গড়ে তোলার সব রকম চেষ্টা করছি।’’ মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়া বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য সচেতনতামূলক প্রচার চালাই আমরা।’’ মেদিনীপুর গ্রামীণের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুলছুট নাবালিকাদের বিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না। এটা উদ্বেগেরই।’’ বিনামূল্যে বই, খাতা, সাইকেল থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা-এ সব দেওয়ার পরেও স্কুলছুট ঠেকানো যাচ্ছে না কেন, প্রশ্ন উঠছে। খড়্গপুর গ্রামীণের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মতে, ‘‘শুধুমাত্র দান-খয়রাতি করে স্কুলের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করা যায় না। তার জন্য চাই সচেতনতা এবং আর্থ সামাজিক উন্নতি।’’ তাঁর মতে, ‘‘পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতির কারণে স্কুল ছাড়ছে কেউ কেউ।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)