Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
West Midnapore

অর্থ কমিশনের ৬১ শতাংশ টাকাই পড়ে

জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের জেলার জন্য মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পায় গ্রাম পঞ্চায়েত। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ করে পায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ।

উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ অধিকাংশ টাকা পড়ে।

উন্নয়নের খাতে বরাদ্দ অধিকাংশ টাকা পড়ে। প্রতীকী চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৯:২৫
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরে এসে জেলা সভাধিপতি তথা গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহকে কড়াভাবেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। তারপরেও পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি! গতি আসেনি কাজে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল বরাদ্দ এলেও কাজের গতি শ্লথ সেখানে। জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত বরাদ্দের প্রায় ৩৯ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ৬১ শতাংশ টাকা পড়েই রয়েছে!

জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের জেলার জন্য মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পায় গ্রাম পঞ্চায়েত। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ করে পায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকা খরচের প্রশ্নে পুরনো নিয়ম ফিরেছে। এক সময়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতই অর্থ কমিশনের টাকা খরচের সুযোগ পেলেও চতুর্দশ অর্থ কমিশনে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি- এই দুইস্তরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ফলে, অর্থ কমিশনের টাকায় উন্নয়নের সুযোগ হারিয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ। এ নিয়ে ওই দুইস্তরে অসন্তোষও দেখা দিয়েছিল। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের জন্যই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দের ৬০ শতাংশ টাকায় (টায়েড ফান্ড) স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্প, শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জল প্রকল্প, বৃষ্টির জল ধরে রাখার মতো প্রকল্প করা যেতে পারে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকায় (আনটায়েড ফান্ড) স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয় পরিকাঠামো গড়া যেতে পারে। পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরকেই সেই মতো কাজের পরিকল্পনা করার কথা জানানো হয়েছিল। সেই খরচে পিছিয়ে পড়েছে জেলা পরিষদ।

সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৮৫ কোটি ২০ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৫৮ টাকা পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। খরচ হয়েছে ৩২ কোটি ৮৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৭০১ টাকা। পড়ে রয়েছে ৫২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৬৫৭ টাকা। শতাংশের নিরিখে খরচ হয়েছে ৩৮.৫৫ শতাংশ টাকা। পড়েই রয়েছে ৬১.৪৫ শতাংশ টাকা। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ৩২ কোটি ৪২ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৭৯ টাকা। শতাংশের নিরিখে যা ৩৮.০৫ শতাংশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৪২ লক্ষ ৯১ হাজার ৩২২ টাকা। শতাংশের নিরিখে যা ০.৫০ শতাংশ।

গত বছর মেদিনীপুরে এসে জেলা সভাধিপতি তথা গড়বেতার বিধায়ক উত্তরার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘তোমাকে আমি এক মাস সময় দিচ্ছি। তারমধ্যে যদি নিজেকে না শোধরাও, আমি তাহলে জেলা পরিষদ চেঞ্জ করে দেব।’’ বৈঠকে মমতাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর দফতরকে (সিএমও) দিয়ে তিনি সমীক্ষা করান। তারপরেও টাকা খরচে এত পিছিয়ে থাকার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। বিজেপি নেত্রী তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘না আছে পরিকল্পনা, না আছে কাজ। কেন্দ্র টাকা পাঠাচ্ছে। সেই টাকা ফেলে রাখা হচ্ছে। আসলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাতেই ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছে তৃণমূল!’’ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে উন্নয়নের টাকা পড়ে থাকছে কেন, আড়ালে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জেলা পরিষদের একাংশ তৃণমূল সদস্যও। এক সদস্যের কথায়, ‘‘উন্নয়নের টাকা ফেলে রাখা যাবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন উতরোতে হবে তো!’’

জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির অবশ্য দাবি, ‘‘কাজ ঠিকঠাকভাবেই এগোচ্ছে। কাজে আরও গতি আনার কথা বলা হয়েছে। বলেছি, উন্নয়নের টাকা ফেলে রাখা যাবে না। পড়ে থাকা টাকা চলতি মার্চের মধ্যেই খরচের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Midnapore Finance commission Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE