E-Paper

দু’-তিন বছরেই মাস্টার প্ল্যান, আশ্বাস মমতার

ঘাটাল-সহ দুই মেদিনীপুরের মানুষকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালে তৎকালীন বাম সরকারের সেচ দফতর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৯
Mamata Banerjee.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে শ্রমিকদের একশো দিনের কাজের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান যে রাজ্য সরকারই রূপায়ণ করবে, ফের সে কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তমলুকের নিমতৌড়ির প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘আগামী দু'-তিন বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সমস্ত কাজ করবে রাজ্য সরকার।’’ কিছু দিন আগে হুগলির আরামবাগের সভায় ঘাটালের সাংসদ দেবকে পাশে নিয়েই এ কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘাটাল-সহ দুই মেদিনীপুরের মানুষকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালে তৎকালীন বাম সরকারের সেচ দফতর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর করে। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৪৯ কোটি টাকা। প্রকল্প রূপায়ণের লক্ষ্যে এলাকায় তৈরি হয় সেচ দফতরের অফিস ও বাংলো। কিন্তু তারপর থেকে নানা জটিলতায় এবং অর্থাভাবে আর কাজ এগোয়নি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের দাবিতে ১৯৯১ সালে ‘ঘাটাল মহকুমা বন্যা প্রতিরোধ কমিটি' আন্দোলনে নামে। ২০০১ সালে ওই কমিটি ভেঙে গঠি হয় 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি'।

ইতিমধ্যে সংশোধিত নতুন প্রকল্প তৈরি হয়। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের ১০টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ৩ টি ব্লককে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করা হয়। সেই সময় কোনও বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্র ৭৫ শতাংশ এবং রাজ্য ২৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করত। পরে তা ৫০ শতাংশ করে ধার্য হয়। তবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে কেন্দ্রে র বিরদ্ধে অর্থ বরাদ্দ না করার অভিযোগ রয়েছে সেই বাম আমল থেকেই। তৃণমূল আমলে সাংসদ দেবও বিষয়টি নিয়ে তদ্বির করেন। তারপর প্রকল্পটি ধাপে ধাপে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন, কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের টেকনিক্যাল কমিটি, মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির ছাড়পত্র পায়।

২০১৭ সালে ঘাটালে বিধ্বংসী বন্যার পর একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা নতুন করে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে। প্রকল্প মূল্য ধার্য হয় ১৭৪০ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ১২৩৮.৯২ কোটি টাকার কাজ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয় ৬০ শতাংশ দেবে কেন্দ্র, বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্য। ২০২২ সালের জুনে ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ার‍্যান্স কমিটির ছাড়পত্রও পায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। তবে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের অধীন একাধিক খাল ও নদী সংস্কার করেছে। সোমবার তমলুকে প্রশাসনিক সভা মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য কোনও দিন টাকা দিল না। সৌমেন মহাপাত্রও যখন মন্ত্রী ছিল অনেকবার চেষ্টা করেছিলেন। আমরা আমাদের টাকায় পলশপাই, ক্ষীরাই-বাকসি, নিউ কাঁসাই, দূর্বাচাটি, চন্দ্রেশ্বর খাল সংস্কার করেছি। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী দু'-তিন বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সমস্ত কাজ করে ফেলব। কেন্দ্রীয় সরকাররে কাছে আর হাত পাতব না, আর দয়া চাইব না।’’

রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সৌমেনও বলেন, ‘‘আমি যখন সেচমন্ত্রী ছিলাম তখন মুখ্যমন্ত্রীর বদান্যতায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অর্ধেক কাজ হয়ে গিয়েছে। উনি যখন বলেছেন তখন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হবেই। এর ফলে শুধু ঘাটালবাসী নয়, দুই মেদিনীপুরের ১৫টি ব্লকের মানুষজন বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।’’

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোট এলেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি শোনা যায়। এত বড় কাজের জন্য রাজ্য সরকার এবারের বাজেটে কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি। কী ভাবে দু'-তিন বছরের মধ্যে এ কাজ করা সম্ভব হবে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee TMC ghatal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy