E-Paper

কাজ চেয়ে নাম লেখাচ্ছেন পরিযায়ীরা

লালগড়ের বাঁধগোড়ার প্রাণেশ মানা শারীরিক কারণে অসম থেকে ফিরেছেন। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর প্রাণেশ বিএড করেছেন। রয়েছে কম্পিউটার ও অটোমোবাইল সংক্রান্ত ডিপ্লোমা।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪৬
কাজ চেয়ে জেলা কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের শিবিরে নাম লেখানোর ভিড়। ঝাড়গ্রামে।

কাজ চেয়ে জেলা কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের শিবিরে নাম লেখানোর ভিড়। ঝাড়গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজের বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতিও দেন। বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সে বার্তার পরে, জেলায় কাজ চেয়ে নাম লিখিয়েছেন দু’শোরও বেশি কর্মপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক। কাজ চাইলেও, বেতন কত মিলবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে তাঁদের অনেকের। আশানুযায়ী বেতন না মিললে, ফের ভিন‌্-রাজ্যে ফিরতে চান, এমনলোকও রয়েছেন।

লালগড়ের বাঁধগোড়ার প্রাণেশ মানা শারীরিক কারণে অসম থেকে ফিরেছেন। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর প্রাণেশ বিএড করেছেন। রয়েছে কম্পিউটার ও অটোমোবাইল সংক্রান্ত ডিপ্লোমা। অসমে বোতল তৈরির কারখানায় মাসে ২৭ হাজার টাকা বেতনের কাজ করতেন। প্রাণেশ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে কাজ দেবেন বলেছেন। গ্রুপ সি বা ডি-র কাজ পেলে ভাল হয়।’’ সাঁকরাইলের কুচলাদাঁড়ি গ্রামের সত্যজিৎ সিং কাজ করতেন বেঙ্গালুরুতে মুরগির খাবার তৈরির কারখানায়। মাসে রোজগার ছিল প্রায় ২৪ হাজার টাকা। বাবার মৃত্যুতে গ্রামে ফেরা সত্যজিৎ বলছেন, ‘‘এখানে থাকতে হলে দিনে গড়ে পাঁচশো টাকা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বলায় নাম লিখিয়েছি ঠিকই। তবে এ রাজ্যে কাজ পাওয়া মুশকিল। না পেলে, আবার চলে যাব।’’

পরিযায়ীর বাইরেও জেলার অনেকে কাজ চেয়ে নাম লেখাচ্ছেন। বিনপুর-১ সিংপুর গ্রামের আজমাইল খান বলেন, ‘‘গ্রামের অনেকে বাইরে কাজ করেন। তাঁদের বাড়ির লোক চিন্তায় আছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাইরে না যেতে। এখানে যা কাজ দেবেন, তা-ই করব।’’

জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুর মতে, ‘‘মানুষ যে মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা রাখেন, এটাই তাঁর প্রমাণ।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর কটাক্ষ, ‘‘এই সরকারের পক্ষে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়।’’

ঝাড়গ্রাম জেলায় নথিভুক্ত পরিযায়ী প্রায় ১৪ হাজার। তবে শুধু পরিযায়ী নন, তাঁদের বাইরেও কর্মপ্রার্থীদের জেলা কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্র থেকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। চলতি আর্থিক বর্ষে ১৬৬ জনকে জেলার বিভিন্ন হোটেল, বিমা ও নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবর্ষে ২১৯ জন কাজ পেয়েছিলেন। তবে সকলেরই বেতন মাসে ১০-১৪ হাজার টাকার মধ্যে।

জেলা কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের উপ-অধিকর্তা অরুণাভ দত্তের দাবি, ‘‘কাজ চাওয়ার এই প্রবণতা ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে অনেকেআসছেন। পরিযায়ীরাও আসছেন।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘এখন যাঁরা নাম নথিভুক্ত করছেন, তাঁদের ‘জব ড্রাইভ’ বা স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে।’’ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরিকল্পনা হচ্ছে। জব ভ্যাকেন্সি হলে, অবশ্যই কাজ মিলবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

harassment Migrant Workers Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy