কালীঘাটের বৈঠকে। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
দলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ টানাপড়েনের আবহেই বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু'জনেই। অভিষেকের সামনেই দলের জেলা নেতৃত্বকে মমতার বার্তা, পুরনোদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে।
লোকসভা ভোটের আগে জেলাভিত্তিক দলীয় বৈঠক শুরু করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটে, তাঁর বাড়ি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে শুরুতেই ডাক পড়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাদের। বিকেলে এই বৈঠকে মমতার একপাশে ছিলেন সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। আরেক পাশে দেব, জুনরা। দীনেন রায়, প্রদ্যোত ঘোষ, আশিস চক্রবর্তীর মতো পুরনো নেতাদের মমতা বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। তাঁর বার্তা, ‘তোমরা এত সিনিয়র। তোমাদের তো সবদিক দেখতে হবে।’ দীনেনকে তিনি বলেছেন, ‘দীনেন, তুমি দুই জেলা (মেদিনীপুর ও ঘাটাল সাংগঠনিক) কো-অর্ডিনেশন করবে। প্রদ্যোত, নান্টি (আশিস) থাকবে। বিধায়কদেরও সঙ্গে নেবে।’ লোকসভা ভোটের আগে জেলায় দলের জনজাতি সংগঠন আরও পোক্ত করা হবে, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মমতা। মানস ভুঁইয়াকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী বলে দলীয় সূত্রে খবর।
দলনেত্রী না কি দুই জেলায় কো-অর্ডিনেশন করার দায়িত্ব আপনাকেই দিয়েছেন? বৈঠক শেষে দীনেন রায়ের জবাব, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ নিয়ে যা করার করব।’’ জানা গিয়েছে, 'কোন্দল জিইয়ে রাখায়' এ দিনের বৈঠকে মমতার বকুনি খেয়েছেন কয়েকজন নেতা। কেশিয়াড়িতে ব্লক সভাপতি পদে পরিবর্তনের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, দেব-জুন, এঁরা সাংস্কৃতিক মঞ্চের। এঁদের তিনি ভালবাসেন। এঁদের সঙ্গে কেউ ঝগড়া করলে, তিনি বরদাস্ত করবেন না।
বৈঠকে ছিলেন জেলার সাংসদ, বিধায়ক, দলের জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতিরা। যুব তৃণমূল, মহিলা তৃণমূল, শ্রমিক তৃণমূল প্রভৃতি শাখা সংগঠনগুলির জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি, পুরসভার পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান, জেলা পরিষদ সদস্যরাও। দলীয় সূত্রে খবর, দলের নিচুতলা থেকে উপরতলা পর্যন্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে আগামী লোকসভা ভোটে একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তাও দিয়েছেন তিনি। কিছু দিন আগে মেদিনীপুরে দলীয় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে পুরসভা চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছিলেন তৃণমূলেরই একদল পুর-প্রতিনিধি। সুজয় হাজরাকে সতর্ক করে মমতা না কি বলেছেন, ‘পুরসভায় ধর্না? ধর্না দেখাচ্ছো আমাকে?’ ধর্নায় সুজয়ের স্ত্রী, পুর-প্রতিনিধি মৌসুমী হাজরা থাকার খবরও যে তাঁর কাছে রয়েছে, স্পষ্ট করেছেন নেত্রী। মমতার নির্দেশ, ‘সুজয়, তুমি জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে।’
মমতার বকুনি খেয়েছেন ঘাটালের শঙ্কর দোলুইও। দেবের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘তৃণমূল যদি ঝগড়া না করে, তাহলে তৃণমূলকে পরাস্ত করার ক্ষমতা কারও নেই। তৃণমূল দিল্লিকে লড়ে নেবে।’
জেলার কোথায় কী হচ্ছে, দলের কে কী করছেন, কোন মাঠের কোথায় পাঁচিল দেওয়া হয়েছে, সব খবরই যে তাঁর কাছে পৌঁছয়, এ দিন তা জানিয়েছেন মমতা। এক নেতার উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘তুমি না কি কানে দুল পরো?’ ওই নেতা অবশ্য জানিয়ে দেন, তিনি কখনও কানে দুল পড়েননি। মমতা এ দিন 'গ্রুপবাজি' বন্ধ করতে বলেছেন নিজের দলের নেতাদের। কেশিয়াড়িতে বিধায়ক পরেশ মুর্মুর সঙ্গে ‘বিরোধ’ রয়েছে ব্লক সভাপতি শ্রীনাথ হেমব্রমের। কেশিয়াড়িতে একটু গড়বড় রয়েছে, তাই ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের কথা দল ভাবছে, এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী।
জানা যাচ্ছে, বৈঠকের শুরুতে বক্তব্য রেখেছেন বক্সী। তারপর অভিষেক। আর তারপর মমতা। বক্সীর বক্তব্য শেষে মমতা নিজেই বলেন, ‘এ বার অভিষেক বলবে।’ আসন্ন লোকসভা ভোটে দল তাঁকে যে দায়িত্ব দেবে, তিনি সেই দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত, বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন অভিষেক। বৈঠক শেষে জেলা তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘দিদি বেশ কিছুক্ষণ বক্তব্য রেখেছেন। রাজনৈতিক বক্তব্য। অভিষেককে একটা বই বানানোর কথাও বলেছেন। যে বইয়ে আমাদের সরকার কী কী করেছে উন্নয়নে, তার তথ্য থাকবে। যে বই পড়ে আমরা জেলায় সভা, সমাবেশে বক্তব্য রাখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy