Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীকে অ্যাসিড ছুড়ে ধৃত স্বামী   

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, হেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দীনেশ মান্না ওরফে বিদ্যাসাগর বছর আটেক আগে ভালবেসে বিয়ে করেছিল দক্ষিণতল্লা গ্রামের বাসিন্দা মান্টি মান্নাকে।

মেঝেতে অ্যাসিডের দাগ। (ইনসেটে) মান্টি মান্না। নিজস্ব চিত্র

মেঝেতে অ্যাসিডের দাগ। (ইনসেটে) মান্টি মান্না। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও খেজুরি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২০
Share: Save:

মাটির মেঝেতে ছড়িয়ে রয়েছে অ্যাসিডের ছোপ ছোপ দাগ। তা দেখতে জানালা দিয়ে উঁকি মারছেন পড়শিরা। ঘরের বাইরেও ইতিউতি প্রতিবেশীদের জটলা। খেজুরির দক্ষিণতল্লা গ্রামের ওই বাড়িতেই শুক্রবার রাতে স্ত্রী এবং দুই এই শিশু কন্যার উপরে অ্যাসিড ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছে অভিযুক্ত। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মহিলা এবং তাঁর দুই সন্তান তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, হেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দীনেশ মান্না ওরফে বিদ্যাসাগর বছর আটেক আগে ভালবেসে বিয়ে করেছিল দক্ষিণতল্লা গ্রামের বাসিন্দা মান্টি মান্নাকে। তাঁদের ছ’বছরের এবং দেড় বছরের দুই শিশু কন্যা রয়েছে। হেড়িয়া বাজারে বিদ্যাসাগরের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই বিদ্যাসাগর তার স্ত্রীকে মারধর করত। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তিও হত।

মাস দুয়েক আগে বছর ছাব্বিশের মান্টি তাকে এবং দুই মেয়েকে ছেড়ে কলকাতায় কাজ করতে চলে গিয়েছিল বলে অভিযোগ বিদ্যাসাগরের। মাস খানেক আগে মান্টি বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন। দাবি, এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ ছিল বিদ্যাসাগর। কয়েকদিন আগে মান্টিকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে শ্বশুরবাড়িতে যায় বিদ্যাসাগর। কিন্তু মান্টি ফিরে যেতে রাজি হননি। এ নিয়ে গ্রামে সালিসি সভাও হয়। অভিযোগ তাতে মান্টি বিবাহ বিচ্ছেদ চান।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুরে বিদ্যাসাগর স্ত্রীকে ঘরে ফেরানোর জন্য দক্ষিণতল্লা গ্রামে তার শ্বশুর বাড়িতে যায়। সে সময়ও দু’জনের বচসা হয়। ক্ষুদ্ধ বিদ্যাসাগর স্ত্রীকে খুনের হুমকি দিয়ে শাশুড়ির মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। ওই দিনই সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিদ্যাসাগর ফের শ্বশুরবাড়ি যায়। সে সময় ঘরে মেয়েদের পড়াচ্ছিলেন মান্টি। স্বামীর ডাক শুনে মান্টি বাইরে যান। বিদ্যাসাগর তাঁকে জানায়, শাশুড়ির ফোন ফিরিয়ে দিতে এসেছে। এর পরে বিদ্যাসাগর জল খেতে চায়। অভিযোগ, এসময় মান্টির মা প্রতিমা কর দরজা খুলে রেখেই জল আনতে যান। অভিযোগ, সেই সুযোগে বিদ্যাসাগর মগ ‌করে মান্টি এবং সন্তানদের দিকে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যায়। অ্যাসিডে পুড়ে যায় মান্টির মুখ, চোখ, কান। বড় মেয়ের মাথায়, পিঠ এবং গালে অ্যাসিড লাগে। ছোট মেয়ের মুখের কিছু অংশও অ্যাসিডে পুড়ে যায়। তাঁদের তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মান্টির মা প্রতিমা বলেন, ‘‘জামাই মেয়ের উপর অত্যাচার করত। এ নিয়ে গ্রামে সালিসি সভায় মেয়ে স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে জামাই আমার মোবাইল নিয়ে চলে যায়। সন্ধ্যায় মোবাইল ফেরত দেওয়ার নাম করে ফিরে এসে এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা ভাবতে পারিনি।’’ একই কথা জানাচ্ছেন মান্টির বৌদি গৌরী কর। মান্টির এক প্রতিবেশী আরতি কর বলেন, “পারিবারিক অশান্তির জেরে ওই দু’জনে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরের এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় ও সময় চেয়েছিল বলে শুনেছি।’’

এ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মান্টি বলেন, ‘‘স্বামী বিয়ের পর থেকেই আমাকে মারধর করত। তাই বিচ্ছেদ চেয়েছিলাম। অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে কলকাতায় কাজ করতে গিয়েছিলাম। শুক্রবারও আমাকে হুমকি দিয়েছিল। এভাবে অ্যাসিড নিয়ে হামলা করবে বুঝতে পারিনি।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে যায় হেড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিকেরা। ঘটনাস্থলে অ্যাসিডের একটি শিশি এবং মগ উদ্ধার করেছেন তাঁরা। কোথা থেকে ওই অ্যাসিড পেল বিদ্যাসাগর, আপাতত তার তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেফতার হওয়ার পরে সে পুলিশকে জানিয়েছে, স্ত্রী তাকে ভালবাসতেন না। বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতেন। তবে ছেলের কর্মকাণ্ডে ‘ক্ষুব্ধ’ বিদ্যাসাগরের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা। সুভাষিনী মান্না নামে ওই বৃদ্ধা এ দিন বলেন, ‘‘না হয় ও আর ফিরবেই না। তা বলে পরের বাড়ির মেয়েকে এমন ভাবে অ্যাসিড মারার কী দরকার ছিল?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Arrest Acid Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE