Advertisement
E-Paper

গলায় কোপ, মাফলারই বাঁচাল প্রাণ

মনুয়া কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি থেকে রেহাই পেল এগরা। এ ক্ষেত্রে স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়ে দিল তাঁর গলায় জড়ানো মাফলার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৯
ধৃত ঝুম্পা ও তরুণ। সোমবার এগরা থানায়। ছবি: গোপাল পাত্র।

ধৃত ঝুম্পা ও তরুণ। সোমবার এগরা থানায়। ছবি: গোপাল পাত্র।

মনুয়া কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি থেকে রেহাই পেল এগরা। এ ক্ষেত্রে স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়ে দিল তাঁর গলায় জড়ানো মাফলার।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা হওয়ায় স্ত্রী ও প্রেমিকের যোগসাজশে খুন হন মনুয়ার স্বামী। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে ২০১৭ সালে ওই ঘটনায় মনুয়ার স্বামী অনুপম সিংহ খুন হলেও এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন এগরার বালিঘাইয়ের বাসিন্দা দীপক বাগ। অভিযোগ, বিবাহ বহিভূর্ত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় পথের কাঁটা সরাতে প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুনের ছক কষেন স্ত্রী। পরিকল্পনা মতো স্বামীর উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় প্রেমিক। কিন্তু গায়ে শীতের চাদর ও গলায় মাফলার থাকায় কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছেন স্বামী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি দীপক। শনিবার রাতে ওই ঘটনায় দীপকের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ স্ত্রী ঝুম্পা ও তার প্রেমিক তরুণ মান্নাকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার ধৃতদের কাঁথি আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’জনের চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এগরার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সব্যসাচী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘দীপকের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতেই ঝুম্পা এবং তার প্রেমিক তরুণকে এগরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে খুনের চেষ্টায় ব্যবহৃত ছুরির সন্ধানের চেষ্টা হচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, তমলুকের রাধামণির বাসিন্দা দীপক বাগ কয়েক বছর আগে রাধামণিতে একটি বেকারির কারখানা খোলেন। সেখানে কাজ করতেন হেঁড়িয়া কণ্ঠিবাড় গ্রামের বছর বাইশের যুবক তরুণ মান্না। কাজ সেরে রাতে কারখানাতেই থাকতেন তিনি। কারখানাতেই তরুণের পাশের ধরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন দীপক। কাজের সূত্রে দীপকের পরিবারের সঙ্গে তরুণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীপকের স্ত্রী ঝুম্পা তরুণকে ভাই পাতান। গত বছর থেকে ব্যবসায় মন্দা চলায় একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন দীপক। শেষ পর্যন্ত ৬ মাস আগে কারখানা বন্ধ করে তরুণ-সহ দীপকের পরিবারের সকলে এগরার বালিঘাইতে একটি সেবাশ্রমে চলে আসেন। আশ্রমে গাড়ি চালানোর কাজ নেন দীপক। আশ্রমেই একটি ঘরে তরুণ এবং দীপকের পরিবার থাকতেন।

পুলিশের দাবি, দীপক জানিয়েছেন তরুণ দোঁবাধির একটি বেকারি কারখানায় কাজ পায়। তরুণ ও ঝুম্পার মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানার পর ঝুম্পাকে কয়েক বার মারধর করা হয়। তরুণকে আশ্রমের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তরুণ ও ঝুম্পার মধ্যে গোপনে মেলামেশা চলছিল বলে অভিযোগ দীপকের। সূত্রের খবর নিজেদের গভীর সম্পর্কে দীপকের বাধা মেনে নিতে পারেনি ঝুম্পা ও তরুণ। গোপনে দীপককে খুনের পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনা মতো গত শনিবার রাত দু’টো নাগাদ ঝুম্পার মোবাইলে ফোন করে তরুণ। ফোন এলে ঝুম্পা কেউ তাঁকে ডাকছে জানিয়ে স্বামী দীপককে বাইরে যেতে বলে। শীতের রাতে ঠান্ডার জন্য দীপক গলায় মাফলার জড়িয়ে ও গায়ে চাদর মুড়িয়ে বাইরে বেরোন। অভিযোগ, বাইরে এলেই অন্ধকারে ছুরি নিয়ে তরুণ তাঁর উপর হামলা চালায়। দীপকের গলায় এবং মাথায় এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। কপালে ও শরীরের অন্য অংশে আঘাত লাগলেও গলায় মাফলার থাকায় কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে যান দীপক। ঘটনায় পরই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। আহত অবস্থায় প্রতিবেশীরা দীপককে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। রবিবার রাতে এগরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দীপক। অভিযোগ পেয়ে ঝুম্পা এবং তরুণকে পুলিশ রাতেই গ্রেফতার করে। দীপকের দাবি, ‘‘ঝুম্পা এবং তরুণ পরিকল্পনা করে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। দু’জনের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’ যদিও তরুণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার দাবি, ‘‘আমি কারও উপর ছুরি নিয়ে হামলা করিনি। সব মিথ্যা।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, খুনের চেষ্টায় ব্যবহৃত ছুরিটি এখনও উদ্ধার হয়নি। তার জন্য ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Murder Egra এগরা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy