আড়াই বছর আগে জমি বিবাদের জেরে প্রতিবেশীকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছিলেন। সেই ঘটনায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বাসিন্দা নন্দদুলাল শী। শুক্রবার তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কাঁথির অতিরিক্ত জেলা বিচারকের (দ্বিতীয় কোর্ট ) শুভদীপ চৌধুরী। সেই সঙ্গে অভিযুক্তকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক।
ভগবানপুর থানা সূত্রে খবর, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ ভগবানপুরের মির্জাপুরের বাসিন্দা মনোরঞ্জন মাইতি নিজের জমিতে ধান বাছছিলেন। সেই সময় পাশের জমিতে থাকা নন্দদুলাল শী এবং স্ত্রী কাজল শী মনোরঞ্জনের সঙ্গে বাগ্বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। কথা কাটাকাটির মাঝে নন্দদুলাল হাতে থাকা কোদাল নিয়ে তেড়ে যান। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালাতে চেষ্টা করেন মনোরঞ্জন। তবে কিছুটা গিয়েই তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। সেই সময় নন্দদুলাল কোদাল দিয়ে মনোরঞ্জনের মাথায় ও মুখে একের পর এক কোপ বসাতে থাকেন। ঘটনাস্থলেই মনোরঞ্জনের মৃত্যু হয়।
আদালত সূত্রে খবর, ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা সুধীর মাইতি অভিযুক্তকে বার বার বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেও বিফল হন। তবে খুনের ঘটনার পরেই অভিযুক্ত ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। সুধীরের মাধ্যমেই এলাকাবাসী গোটা ঘটনার কথা জানতে পেরে পুলিশে খবর দেন। ভগবানপুর থানার পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃতের ছেলে বাপি মাইতির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়। পরে গ্রেফতার হন নন্দদুলাল।
আরও পড়ুন:
কাঁথি মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী মঞ্জুর রহমান খানের দাবি, নজির গড়ে আড়াই বছরেরও কম সময়ে এই মামলায় অভিযুক্তকে কঠোর শাস্তি দিয়েছেন বিচারক। এ জন্য তিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার এবং সাক্ষীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী বলেন, “নিহতের ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে ভগবানপুর থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের হয়। মামলায় ১৩ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী অফিসার সাব-ইনস্পেক্টর পীযূষকান্তি মাইতি ৬৬ দিনের মাথায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন। পরে মামলা চলাকালীন সরকারের তরফে ১১ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। বিচারক শুভদীপ চৌধুরী সমস্ত তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে গত বৃহস্পতিবার নন্দদুলালকে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন । শুক্রবার তাঁর সাজা ঘোষণা হয়েছে। তবে নন্দদুলালের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না মেলায় তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়।”