সুব্রত চক্রবর্তী
তামিল কল্পবিজ্ঞানের ছবি ‘২৪’-এ সেরা শিল্প নির্দেশনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র সুব্রত চক্রবর্তী। ছবিতে একটি ঘড়িকে কেন্দ্র করে টাইম-মেশিনের সেট বানিয়েছেন সুব্রত ও তাঁর প্রোডাকশন ইউনিটের কলাকুশলীরা। এই শিল্প-ভাবনার জন্যই মিলছে জাতীয় পুরস্কার।
সম্প্রতি ৬৪ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। নয়াদিল্লির বিজ্ঞান-ভবনে ৩ মে পুরস্কার দেওয়া হবে। অরণ্যশহরে তাই এখন খুশির হাওয়া। সুব্রত স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে মুম্বইয়ে থাকেন। ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বহুতলে থাকেন তাঁর বাবা, অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী দেবব্রত চক্রবর্তী ও মা লিপিকাদেবী। ছেলের পুরস্কার-প্রাপ্তি দু’জনেই খুশি। দম্পতির কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে বাবাই (সুব্রতর ডাক নাম) ছবি আঁকতে ভীষণ ভালবাসত। অনেক পরিশ্রম আর সমালোচনার জবাব ছেলের এই পুরস্কার-প্রাপ্তি।” নিজের পুরস্কার বাবা-মা এবং স্ত্রীকেই উৎসর্গ করেছেন সুব্রত।
অরণ্যশহরেই সুব্রতর বেড়ে ওঠা। ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কল্যাণী মহাপাত্রের কাছে তাঁর আঁকায় হাতেখড়ি। রবীন্দ্রভারতী থেকে ১৯৯৭ সালে ‘মাস্টার অব ভিজুয়্যাল আর্টস্’-এ উল্লেখযোগ্য ফলের জন্য স্বর্ণপদক পান। এরপর মুম্বই পাড়ি। ২০০০ সালে শিল্প নির্দেশক সাদেক আলির সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বছর খানেক পরে প্রখ্যাত শিল্প নির্দেশক সমীর চন্দর ইউনিটে যোগ দেন সুব্রত। সমীরবাবুর শিল্প নির্দেশনায় ‘বোস দ্য ফরগটন হিরো’, ‘রং দে বসন্তী’র মতো কিছু ছবির সেট তৈরির ক্ষেত্রে সুব্রতর প্রধান ভূমিকা ছিল। তাঁর প্রথম একক কাজ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘জানলা’। সেটা ২০০৯ সাল। এর বছর খানেক পরেই সুব্রত বন্ধু অমিত রায়কে নিয়ে নিজেদের প্রোডাকশন ডিজাইনিং সংস্থা ‘ক্রিয়েটিভ ইন্সটিংক্ট’ খোলেন।
গত কয়েক বছরে একের পর এক ছবিতে চোখ ধাঁধানো সেট বানিয়ে মুম্বই চলচ্চিত্র জগতে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন সুব্রতেরা। ‘হায়দার’ থেকে ‘গুলাব গ্যং’, ‘তলোয়ার’ থেকে ‘উড়তা পঞ্জাব’— ২২টি হিন্দি ছবিতে শিল্প নির্দেশকের কাজ করেছেন সুব্রত। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। বর্তমানে সঞ্জয় লীলা বনশালীর বহুচর্চিত ‘পদ্মাবতী’র প্রোডাকশন ডিজাইনের দায়িত্বে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের যুবক। তবে, জাতীয় পুরস্কার তাঁকে এনে দিল তামিল ছবি।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের ছেলেবেলার শহরকে ভুলতে পারেননি সুব্রত। অরণ্য-পাহাড়ের লোকেশনে সেট তৈরির স্বপ্ন দেখেন। তাই মুম্বইয়ের ছবি নির্মাতা-নির্দেশকদের ঝাড়গ্রামে শ্যুটিং করার অনুরোধও চালিয়ে যান কাজের ফাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy